Pip
পিপ : ক্রিপ্টোফিউচার্স ট্রেডিংয়ের ভিত্তি
ভূমিকা
পিপ (Pip) ফিনান্সিয়াল মার্কেটের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা, বিশেষ করে ফরেক্স ট্রেডিং এবং ক্রিপ্টোফিউচার্স ট্রেডিং-এর ক্ষেত্রে। এটি কোনো কারেন্সি পেয়ার বা অ্যাসেটের দামের ক্ষুদ্রতম পরিবর্তনকে নির্দেশ করে। পিপ বোঝা একজন ট্রেডারের জন্য অত্যন্ত জরুরি, কারণ এটি ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, পজিশন সাইজিং এবং লাভ-ক্ষতির হিসাব করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই নিবন্ধে, পিপের সংজ্ঞা, গণনা পদ্ধতি, তাৎপর্য এবং ক্রিপ্টোফিউচার্স ট্রেডিংয়ে এর ব্যবহার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
পিপের সংজ্ঞা
পিপ (Pip) হলো "Percentage in Point" এর সংক্ষিপ্ত রূপ। এটি দুটি কারেন্সির মধ্যে দামের সবচেয়ে ছোট পরিবর্তন। সাধারণত, পিপ হলো দশমিকের চতুর্থ ঘর। যেমন, EUR/USD কারেন্সি পেয়ারের দাম যদি 1.1000 থেকে 1.1001 হয়, তবে এটি এক পিপের পরিবর্তন।
বিভিন্ন কারেন্সি পেয়ারে পিপের মান ভিন্ন হতে পারে। যেমন:
- EUR/USD, GBP/USD, USD/JPY-এর মতো পেয়ারগুলোতে, যেখানে দ্বিতীয় কারেন্সি USD (ডলার), সেখানে পিপের মান হলো $0.0001।
- GBP/JPY, EUR/JPY-এর মতো পেয়ারগুলোতে, যেখানে দ্বিতীয় কারেন্সি JPY (জাপানি ইয়েন), সেখানে পিপের মান হলো ¥0.01।
- যেসব কারেন্সি পেয়ারে USD দ্বিতীয় কারেন্সি নয়, যেমন EUR/GBP, সেখানে পিপের মান কারেন্সিগুলোর পারস্পরিক মূল্যের উপর নির্ভর করে।
পিপের প্রকারভেদ
পিপ প্রধানত দুই ধরনের হয়ে থাকে:
১. স্ট্যান্ডার্ড পিপ: এটি হলো সবচেয়ে প্রচলিত পিপ, যেখানে দামের পরিবর্তন দশমিকের চতুর্থ ঘর পর্যন্ত ধরা হয়।
২. মিনি পিপ/ফ্র্যাকশনাল পিপ: কিছু ব্রোকার মিনি পিপ বা ফ্র্যাকশনাল পিপ অফার করে, যেখানে দামের পরিবর্তন দশমিকের পঞ্চম ঘর পর্যন্ত ধরা হয়। এটি স্ট্যান্ডার্ড পিপের এক-দশমাংশ।
পিপ গণনা করার পদ্ধতি
পিপ গণনা করা বেশ সহজ। নিচে কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হলো:
উদাহরণ ১: EUR/USD কারেন্সি পেয়ারের দাম 1.1000 থেকে 1.1005 হলে, এখানে মোট 5 পিপের পরিবর্তন হয়েছে।
উদাহরণ ২: USD/JPY কারেন্সি পেয়ারের দাম 110.00 থেকে 110.10 হলে, এখানে 10 পিপের পরিবর্তন হয়েছে।
উদাহরণ ৩: GBP/JPY কারেন্সি পেয়ারের দাম 150.00 থেকে 150.03 হলে, এখানে 3 পিপের পরিবর্তন হয়েছে।
ক্রিপ্টোফিউচার্স ট্রেডিংয়ে পিপের তাৎপর্য
ক্রিপ্টোফিউচার্স ট্রেডিং-এ পিপের তাৎপর্য ফরেক্স ট্রেডিংয়ের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। ক্রিপ্টোকারেন্সির দাম প্রায়শই দ্রুত পরিবর্তিত হয়, তাই পিপ বোঝা ট্রেডারদের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহায়ক।
১. ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা: পিপের মাধ্যমে ট্রেডাররা তাদের ঝুঁকির মাত্রা নির্ধারণ করতে পারে। প্রতিটি ট্রেডে কত পিপের মুভমেন্টে স্টপ-লস অর্ডার সেট করতে হবে, তা পিপের মান হিসাব করে নির্ধারণ করা যায়।
২. পজিশন সাইজিং: পিপের মান জেনে ট্রেডাররা তাদের পজিশনের আকার নির্ধারণ করতে পারে। এর মাধ্যমে তারা নিশ্চিত করতে পারে যে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ঝুঁকি নেওয়ার জন্য তাদের পজিশনটি উপযুক্ত কিনা।
৩. লাভ-ক্ষতির হিসাব: পিপের মাধ্যমে ট্রেডাররা তাদের সম্ভাব্য লাভ বা ক্ষতি হিসাব করতে পারে। প্রতিটি পিপের আর্থিক মূল্য জেনে, তারা বুঝতে পারে যে একটি ট্রেড থেকে তারা কত টাকা লাভ বা ক্ষতি করতে পারে।
৪. টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস: টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস করার সময় পিপ গুরুত্বপূর্ণ। সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেলগুলো চিহ্নিত করতে এবং ট্রেডিং সিগন্যাল জেনারেট করতে এটি ব্যবহৃত হয়।
পিপ এবং লিভারেজ
লিভারেজ হলো ব্রোকার কর্তৃক প্রদত্ত একটি সুবিধা, যা ট্রেডারদের তাদের অ্যাকাউন্টের ব্যয়ের চেয়ে বেশি পরিমাণে ট্রেড করতে সাহায্য করে। লিভারেজ ব্যবহারের ক্ষেত্রে পিপের গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়, কারণ এটি সম্ভাব্য লাভ এবং ক্ষতি উভয়কেই বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।
উদাহরণস্বরূপ, যদি একজন ট্রেডার 1:100 লিভারেজ ব্যবহার করে এবং EUR/USD কারেন্সি পেয়ারে 1000 ডলারের একটি পজিশন নেয়, তাহলে তার প্রকৃত ট্রেডিং ক্ষমতা হবে 100,000 ডলার। এখন, যদি EUR/USD-এর দাম 1 পিপ বৃদ্ধি পায়, তবে তার লাভ হবে 10 ডলার (100,000 x 0.0001)। একইভাবে, যদি দাম 1 পিপ কমে যায়, তবে তার ক্ষতিও হবে 10 ডলার।
পিপের উপর ভিত্তি করে ট্রেডিং কৌশল
বিভিন্ন ট্রেডিং কৌশল পিপের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়। নিচে কয়েকটি জনপ্রিয় কৌশল আলোচনা করা হলো:
১. স্কাল্পিং: এটি একটি স্বল্পমেয়াদী কৌশল, যেখানে ট্রেডাররা খুব অল্প সময়ের মধ্যে ছোট ছোট লাভ করার চেষ্টা করে। স্কাল্পিংয়ের ক্ষেত্রে, ট্রেডাররা সাধারণত কয়েক পিপের মুভমেন্ট থেকে লাভ করে।
২. ডে ট্রেডিং: এই কৌশলটিতে ট্রেডাররা দিনের শুরুতেই পজিশন নেয় এবং দিনের শেষ হওয়ার আগে তা ক্লোজ করে দেয়। ডে ট্রেডিংয়ে ট্রেডাররা সাধারণত কয়েক থেকে কয়েকশ পিপের মুভমেন্ট লক্ষ্য করে।
৩. সুইং ট্রেডিং: এটি একটি মধ্যমেয়াদী কৌশল, যেখানে ট্রেডাররা কয়েক দিন বা কয়েক সপ্তাহ ধরে পজিশন ধরে রাখে। সুইং ট্রেডিংয়ে ট্রেডাররা সাধারণত কয়েকশ পিপ থেকে কয়েক হাজার পিপের মুভমেন্ট লক্ষ্য করে।
৪. পজিশন ট্রেডিং: এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী কৌশল, যেখানে ট্রেডাররা কয়েক মাস বা কয়েক বছর ধরে পজিশন ধরে রাখে। পজিশন ট্রেডিংয়ে ট্রেডাররা বড় ধরনের মুভমেন্ট থেকে লাভ করার চেষ্টা করে।
পিপ এবং ট্রেডিং ভলিউম
ট্রেডিং ভলিউম এবং পিপ একে অপরের সাথে সম্পর্কিত। উচ্চ ভলিউম সাধারণত বড় মুভমেন্টের ইঙ্গিত দেয়, যেখানে কম ভলিউম ছোট মুভমেন্টের ইঙ্গিত দেয়। ট্রেডাররা ভলিউম অ্যানালাইসিস করে পিপের মুভমেন্টের সম্ভাব্য দিক এবং শক্তি সম্পর্কে ধারণা পেতে পারে।
পিপের সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য ধারণা
- স্প্রেড: স্প্রেড হলো একটি কারেন্সি পেয়ারের বিড এবং আস্ক প্রাইসের মধ্যে পার্থক্য। এটিও পিপে পরিমাপ করা হয়।
- স্টপ-লস: স্টপ-লস হলো একটি অর্ডার, যা ট্রেডারদের একটি নির্দিষ্ট মূল্যে তাদের পজিশন ক্লোজ করতে সাহায্য করে, যাতে তারা অতিরিক্ত ক্ষতি থেকে বাঁচতে পারে। স্টপ-লস সাধারণত পিপে সেট করা হয়।
- টেক প্রফিট: টেক প্রফিট হলো একটি অর্ডার, যা ট্রেডারদের একটি নির্দিষ্ট মূল্যে তাদের পজিশন ক্লোজ করতে সাহায্য করে, যাতে তারা লাভ নিশ্চিত করতে পারে। টেক প্রফিটও সাধারণত পিপে সেট করা হয়।
- রিস্ক-রিওয়ার্ড রেশিও: এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মেট্রিক, যা ট্রেডারদের ঝুঁকির তুলনায় সম্ভাব্য লাভের পরিমাণ মূল্যায়ন করতে সাহায্য করে। এটিও পিপের উপর ভিত্তি করে হিসাব করা হয়।
ক্রিপ্টোফিউচার্স মার্কেটে পিপ ব্যবহারের সুবিধা
১. নির্ভুলতা: পিপের মাধ্যমে ট্রেডাররা দামের ছোট পরিবর্তনগুলোও সঠিকভাবে পরিমাপ করতে পারে, যা তাদের ট্রেডিং সিদ্ধান্তকে আরও নির্ভুল করে তোলে।
২. নমনীয়তা: পিপ ট্রেডারদের তাদের ট্রেডিং কৌশল এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা অনুযায়ী পজিশন সাইজ এবং স্টপ-লস লেভেল নির্ধারণ করতে সাহায্য করে।
৩. স্বচ্ছতা: পিপের ব্যবহার ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিয়ে আসে, কারণ এটি ট্রেডারদের সম্ভাব্য লাভ এবং ক্ষতির একটি সুস্পষ্ট ধারণা দেয়।
৪. দক্ষতা: পিপের মাধ্যমে ট্রেডাররা তাদের ট্রেডিং কার্যক্রমকে আরও দক্ষভাবে পরিচালনা করতে পারে এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
উপসংহার
পিপ ক্রিপ্টোফিউচার্স ট্রেডিংয়ের একটি মৌলিক উপাদান। এটি বোঝা একজন ট্রেডারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, পজিশন সাইজিং এবং লাভ-ক্ষতির হিসাব করার ক্ষেত্রে সহায়ক। সঠিক পিপ গণনা এবং এর তাৎপর্য অনুধাবন করে ট্রেডাররা তাদের ট্রেডিং দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারে এবং সফল ট্রেডার হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। ক্রিপ্টোফিউচার্স মার্কেটে সাফল্যের জন্য পিপের ব্যবহার অপরিহার্য।
আরও জানতে:
ফরেক্স ট্রেডিং ক্রিপ্টোফিউচার্স ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা পজিশন সাইজিং লিভারেজ টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস ট্রেডিং ভলিউম স্টপ-লস অর্ডার টেক প্রফিট অর্ডার ফিনান্সিয়াল মার্কেট মার্কেট সেন্টিমেন্ট ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন মুভিং এভারেজ আরএসআই (Relative Strength Index) MACD (Moving Average Convergence Divergence) ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট বোলিঙ্গার ব্যান্ড সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স ট্রেডিং সাইকোলজি মার্কেট ট্রেন্ড
কারেন্সি পেয়ার | পিপের মান |
EUR/USD | $0.0001 |
USD/JPY | ¥0.01 |
GBP/USD | $0.0001 |
GBP/JPY | ¥0.01 |
EUR/GBP | পরিবর্তনশীল |
সুপারিশকৃত ফিউচার্স ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম
প্ল্যাটফর্ম | ফিউচার্স বৈশিষ্ট্য | নিবন্ধন |
---|---|---|
Binance Futures | 125x পর্যন্ত লিভারেজ, USDⓈ-M চুক্তি | এখনই নিবন্ধন করুন |
Bybit Futures | চিরস্থায়ী বিপরীত চুক্তি | ট্রেডিং শুরু করুন |
BingX Futures | কপি ট্রেডিং | BingX এ যোগদান করুন |
Bitget Futures | USDT দ্বারা সুরক্ষিত চুক্তি | অ্যাকাউন্ট খুলুন |
BitMEX | ক্রিপ্টোকারেন্সি প্ল্যাটফর্ম, 100x পর্যন্ত লিভারেজ | BitMEX |
আমাদের কমিউনিটির সাথে যোগ দিন
@strategybin টেলিগ্রাম চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন আরও তথ্যের জন্য। সেরা লাভজনক প্ল্যাটফর্ম – এখনই নিবন্ধন করুন।
আমাদের কমিউনিটিতে অংশ নিন
@cryptofuturestrading টেলিগ্রাম চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন বিশ্লেষণ, বিনামূল্যে সংকেত এবং আরও অনেক কিছু পেতে!