হার্ডিং বায়াস
হার্ডিং বায়াস
হার্ডিং বায়াস হলো একটি আচরণগত ত্রুটি যা বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় অতীতের তথ্যের উপর অতিরিক্ত নির্ভর করে এবং ভবিষ্যতের বাজারের গতিবিধি সম্পর্কে ভুল ধারণা পোষণ করে। এই ত্রুটিটি মূলত টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস এবং ফিনান্সিয়াল মার্কেট-এর পূর্বাভাস দেওয়ার ক্ষেত্রে দেখা যায়। এই বায়াস বিনিয়োগকারীদের যুক্তিপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে বাধা দেয় এবং আর্থিক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
হার্ডিং বায়াসের সংজ্ঞা
হার্ডিং বায়াস (Harding Bias) -এর নামকরণ করা হয়েছে আমেরিকান অর্থনীতিবিদ জর্জ এফ. হার্ডিং-এর নামানুসারে। তিনি ১৯ শতকে শেয়ার বাজারের গতিবিধি নিয়ে গবেষণা করার সময় এই বিষয়টির ওপর আলোকপাত করেন। হার্ডিং পর্যবেক্ষণ করেন যে, বিনিয়োগকারীরা সাধারণত সাম্প্রতিক বাজারের প্রবণতাগুলোকে দীর্ঘমেয়াদী ভবিষ্যৎ হিসেবে ধরে নেয়। এর ফলে তারা বাজারের স্বাভাবিক চক্র এবং অপ্রত্যাশিত পরিবর্তনগুলোকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে পারে না।
হার্ডিং বায়াস মূলত "সাম্প্রতিকতা বিভ্রম" (Recency Illusion)-এর একটি অংশ, যেখানে মানুষ সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোকে বেশি গুরুত্ব দেয় এবং অতীতের ঘটনাগুলোকে কম গুরুত্ব দেয়।
হার্ডিং বায়াসের কারণসমূহ
হার্ডিং বায়াসের কয়েকটি প্রধান কারণ রয়েছে:
- মানসিক হিসাব: মানুষের মন সহজে সাম্প্রতিক ঘটনা মনে রাখতে পারে। তাই বিনিয়োগকারীরা সাম্প্রতিক লাভ বা ক্ষতির স্মৃতি বেশি মনে রাখে এবং সেগুলোর ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেয়।
- অনুভূতিপ্রবণতা: লাভ বা ক্ষতির অনুভূতি বিনিয়োগকারীদের বিচারবুদ্ধিকে প্রভাবিত করে। যখন বাজারে लगातार লাভ হয়, তখন বিনিয়োগকারীরা অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হয়ে পড়ে এবং আরও বেশি ঝুঁকি নিতে উৎসাহিত হয়।
- সীমাবদ্ধ যৌক্তিকতা: মানুষের মস্তিষ্কের তথ্য প্রক্রিয়াকরণের ক্ষমতা সীমিত। তাই তারা সব তথ্য বিশ্লেষণ না করে সহজলভ্য তথ্যের ওপর নির্ভর করে।
- গণমাধ্যমের প্রভাব: গণমাধ্যম প্রায়শই সাম্প্রতিক বাজারের ঘটনাগুলোকে বেশি গুরুত্ব দেয়, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হার্ডিং বায়াস তৈরি করতে পারে।
হার্ডিং বায়াসের উদাহরণ
- মনে করুন, কোনো একটি ক্রিপ্টোকারেন্সি গত কয়েক মাসে लगातार বেড়েছে। হার্ডিং বায়াসের কারণে বিনিয়োগকারীরা মনে করতে পারে যে এই বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকবে এবং তারা আরও বেশি পরিমাণে সেই ক্রিপ্টোকারেন্সি কিনতে শুরু করে। কিন্তু যদি বাজারের পরিস্থিতি পরিবর্তন হয় এবং ক্রিপ্টোকারেন্সির দাম কমতে শুরু করে, তাহলে তারা বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে।
- শেয়ার বাজারে যদি কোনো নির্দিষ্ট সেক্টরের শেয়ারের দাম বাড়ে, তাহলে বিনিয়োগকারীরা সেই সেক্টরের অন্যান্য শেয়ারগুলোকেও কিনতে শুরু করে, কারণ তারা মনে করে যে এই সেক্টরের উন্নতি অব্যাহত থাকবে।
- বিটকয়েন এর দাম যখন দ্রুত বৃদ্ধি পায়, তখন অনেক নতুন বিনিয়োগকারী শুধুমাত্র এই কারণে বিটকয়েনে বিনিয়োগ করে যে তারা শুনেছে এটি একটি লাভজনক বিনিয়োগ। তারা বাজারের ঝুঁকি এবং দীর্ঘমেয়াদী সম্ভাবনা সম্পর্কে ভালোভাবে জানে না।
হার্ডিং বায়াসের প্রভাব
হার্ডিং বায়াস বিনিয়োগকারীদের বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করতে পারে:
- অতিরিক্ত ঝুঁকি গ্রহণ: বিনিয়োগকারীরা অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের কারণে বেশি ঝুঁকি নিতে পারে, যা তাদের পুঁজি হারানোর কারণ হতে পারে।
- ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ: বাজারের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ভুল ধারণা তৈরি হওয়ার কারণে বিনিয়োগকারীরা ভুল সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
- দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ব্যাহত: হার্ডিং বায়াসের কারণে বিনিয়োগকারীরা তাদের দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ পরিকল্পনা থেকে বিচ্যুত হতে পারে।
- বাজারের অস্থিরতা বৃদ্ধি: যখন অনেক বিনিয়োগকারী একই ধরনের ভুল সিদ্ধান্ত নেয়, তখন বাজারে অস্থিরতা বৃদ্ধি পায়।
হার্ডিং বায়াস থেকে মুক্তির উপায়
হার্ডিং বায়াস থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে:
- দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিকোণ: বিনিয়োগের সময় দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য স্থির করতে হবে এবং বাজারের স্বল্পমেয়াদী ওঠানামায় প্রভাবিত হওয়া উচিত নয়।
- গবেষণা ও বিশ্লেষণ: কোনো কিছুতে বিনিয়োগ করার আগে সেই সম্পর্কে ভালোভাবে গবেষণা করতে হবে এবং বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করতে হবে। মৌলিক বিশ্লেষণ এক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ।
- ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা: বিনিয়োগের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে এবং সেই অনুযায়ী ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার কৌশল অবলম্বন করতে হবে।
- পোর্টফোলিও বৈচিত্র্য: বিনিয়োগের পোর্টফোলিওতে বৈচিত্র্য আনতে হবে, যাতে কোনো একটি নির্দিষ্ট খাতে ক্ষতির সম্মুখীন হলে অন্য খাত থেকে সেই ক্ষতি পূরণ করা যায়।
- আবেগ নিয়ন্ত্রণ: বিনিয়োগের সময় আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং যুক্তিপূর্ণভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
- বিশেষজ্ঞের পরামর্শ: প্রয়োজনে আর্থিক উপদেষ্টার পরামর্শ নিতে পারেন।
- নিয়মিত পর্যালোচনা: আপনার বিনিয়োগের পোর্টফোলিও নিয়মিত পর্যালোচনা করুন এবং প্রয়োজনে পরিবর্তন করুন।
বৈশিষ্ট্য | বিবরণ | |
সাম্প্রতিক প্রবণতার উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা | বিনিয়োগকারীরা শুধুমাত্র সাম্প্রতিক বাজারের গতিবিধির উপর ভিত্তি করে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ধারণা তৈরি করে। | |
অতীতের তথ্য উপেক্ষা করা | দীর্ঘমেয়াদী ডেটা এবং ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা না করা। | |
অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস | লাভের সময় বিনিয়োগকারীরা নিজেদের দক্ষতা সম্পর্কে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হয়ে পড়ে। | |
আবেগপ্রবণ সিদ্ধান্ত | ভয় বা লোভের বশে তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্ত নেওয়া। | |
গণমাধ্যমের প্রভাব | গণমাধ্যমে প্রচারিত খবরের উপর ভিত্তি করে বিনিয়োগ করা। |
ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেটে হার্ডিং বায়াস
ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেট অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং এখানে দামের পরিবর্তন খুব দ্রুত হয়। এই কারণে ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেটে হার্ডিং বায়াসের প্রভাব বেশি দেখা যায়। অনেক বিনিয়োগকারী শুধুমাত্র সাম্প্রতিক দামের বৃদ্ধির ওপর ভিত্তি করে কোনো ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ করে এবং যখন দাম কমতে শুরু করে, তখন তারা বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
উদাহরণস্বরূপ, ২০২১ সালে বিটকয়েনের দাম দ্রুত বাড়ার সময় অনেক নতুন বিনিয়োগকারী শুধুমাত্র এই কারণে বিটকয়েনে বিনিয়োগ করে যে তারা শুনেছে এটি একটি লাভজনক বিনিয়োগ। তারা বাজারের ঝুঁকি এবং দীর্ঘমেয়াদী সম্ভাবনা সম্পর্কে ভালোভাবে জানে না। ফলস্বরূপ, ২০২২ সালে বিটকয়েনের দাম কমে গেলে তারা বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
ডিপ লার্নিং এবং মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে এই বায়াস চিহ্নিত করা যেতে পারে।
টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস এবং হার্ডিং বায়াস
টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস হলো বাজারের অতীতের দাম এবং ভলিউমের ডেটা বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যতের দামের পূর্বাভাস দেওয়ার একটি পদ্ধতি। হার্ডিং বায়াস টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিসের কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে, কারণ বিনিয়োগকারীরা সাম্প্রতিক ডেটার উপর বেশি মনোযোগ দেয় এবং দীর্ঘমেয়াদী প্রবণতাগুলো উপেক্ষা করে।
বিভিন্ন চার্ট প্যাটার্ন এবং ইন্ডিকেটর ব্যবহার করে হার্ডিং বায়াস চিহ্নিত করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, মুভিং এভারেজ (Moving Average) এবং আরএসআই (RSI) এর মতো ইন্ডিকেটরগুলো বাজারের গতিবিধি সম্পর্কে ধারণা দিতে পারে।
ট্রেডিং ভলিউম এবং হার্ডিং বায়াস
ট্রেডিং ভলিউম হলো একটি নির্দিষ্ট সময়ে কোনো শেয়ার বা ক্রিপ্টোকারেন্সির কতগুলো ইউনিট কেনাবেচা হয়েছে তার পরিমাণ। হার্ডিং বায়াসের কারণে ট্রেডিং ভলিউমে অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখা যেতে পারে। যখন বিনিয়োগকারীরা কোনো শেয়ার বা ক্রিপ্টোকারেন্সি সম্পর্কে অতিরিক্ত আশাবাদী হয়, তখন ট্রেডিং ভলিউম বেড়ে যায়, এবং যখন তারা হতাশ হয়, তখন ট্রেডিং ভলিউম কমে যায়।
ভলিউম ওয়েটেড এভারেজ প্রাইস (VWAP) এবং অন ব্যালেন্স ভলিউম (OBV) এর মতো ইন্ডিকেটরগুলো ট্রেডিং ভলিউম বিশ্লেষণ করতে সাহায্য করে এবং হার্ডিং বায়াস চিহ্নিত করতে পারে।
উপসংহার
হার্ডিং বায়াস একটি সাধারণ আচরণগত ত্রুটি যা বিনিয়োগকারীদের ভুল সিদ্ধান্ত নিতে উৎসাহিত করে। এই বায়াস থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিকোণ, গবেষণা ও বিশ্লেষণ, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেটে এই বায়াসের প্রভাব বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, তাই বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকতে হবে এবং যুক্তিপূর্ণভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
আরও জানতে:
- আচরণগত অর্থনীতি
- ফিনান্সিয়াল মার্কেট
- টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস
- মৌলিক বিশ্লেষণ
- ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা
- বিনিয়োগ পরিকল্পনা
- বিটকয়েন
- ক্রিপ্টোকারেন্সি
- ডিপ লার্নিং
- মেশিন লার্নিং
- চার্ট প্যাটার্ন
- ইন্ডিকেটর
- মুভিং এভারেজ
- আরএসআই
- ট্রেডিং ভলিউম
- VWAP
- OBV
- বাজারের চক্র
- সাম্প্রতিকতা বিভ্রম
- আবেগ নিয়ন্ত্রণ
- আর্থিক উপদেষ্টা
সুপারিশকৃত ফিউচার্স ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম
প্ল্যাটফর্ম | ফিউচার্স বৈশিষ্ট্য | নিবন্ধন |
---|---|---|
Binance Futures | 125x পর্যন্ত লিভারেজ, USDⓈ-M চুক্তি | এখনই নিবন্ধন করুন |
Bybit Futures | চিরস্থায়ী বিপরীত চুক্তি | ট্রেডিং শুরু করুন |
BingX Futures | কপি ট্রেডিং | BingX এ যোগদান করুন |
Bitget Futures | USDT দ্বারা সুরক্ষিত চুক্তি | অ্যাকাউন্ট খুলুন |
BitMEX | ক্রিপ্টোকারেন্সি প্ল্যাটফর্ম, 100x পর্যন্ত লিভারেজ | BitMEX |
আমাদের কমিউনিটির সাথে যোগ দিন
@strategybin টেলিগ্রাম চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন আরও তথ্যের জন্য। সেরা লাভজনক প্ল্যাটফর্ম – এখনই নিবন্ধন করুন।
আমাদের কমিউনিটিতে অংশ নিন
@cryptofuturestrading টেলিগ্রাম চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন বিশ্লেষণ, বিনামূল্যে সংকেত এবং আরও অনেক কিছু পেতে!