স্ট্র্যাডলস

cryptofutures.trading থেকে
পরিভ্রমণে চলুন অনুসন্ধানে চলুন

স্ট্র্যাডলস : একটি বিস্তারিত আলোচনা

ভূমিকা

ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেটে ট্রেডিংয়ের জন্য স্ট্র্যাডল একটি বহুল ব্যবহৃত এবং জনপ্রিয় কৌশল। এটি মূলত একটি অপশন ট্রেডিং কৌশল যা বিনিয়োগকারীদের মার্কেটের ভবিষ্যৎ গতিবিধি সম্পর্কে ধারণা না থাকলেও লাভ করার সুযোগ করে দেয়। এই নিবন্ধে, স্ট্র্যাডল কী, কীভাবে এটি কাজ করে, এর সুবিধা-অসুবিধা, এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেটে এটি ব্যবহারের নিয়মাবলী বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হবে।

স্ট্র্যাডল কী?

স্ট্র্যাডল হলো একটি ডেরিভেটিভ কৌশল, যেখানে একই স্ট্রাইক প্রাইস এবং মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখের একটি কল অপশন এবং একটি পুট অপশন কেনা হয়। এই কৌশলটি সাধারণত তখন ব্যবহার করা হয়, যখন বিনিয়োগকারী মনে করেন যে কোনো সম্পদের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে বা কমবে, কিন্তু কোন দিকে যাবে তা নিশ্চিত হতে পারেন না।

স্ট্র্যাডলের মূল ধারণা হলো, দাম যে দিকেই যাক না কেন, একটি অপশন লাভজনক হবে। যদি দাম স্ট্রাইক প্রাইসের উপরে যায়, তাহলে কল অপশনটি লাভজনক হবে। আবার, যদি দাম স্ট্রাইক প্রাইসের নিচে নেমে যায়, তাহলে পুট অপশনটি লাভজনক হবে।

স্ট্র্যাডল কিভাবে কাজ করে?

স্ট্র্যাডল কৌশলটি বুঝতে হলে, প্রথমে কল অপশন এবং পুট অপশন সম্পর্কে জানতে হবে।

  • কল অপশন: এটি ক্রেতাকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট দামে একটি সম্পদ কেনার অধিকার দেয়।
  • পুট অপশন: এটি ক্রেতাকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট দামে একটি সম্পদ বিক্রি করার অধিকার দেয়।

একটি স্ট্র্যাডল তৈরি করতে, একজন বিনিয়োগকারী একই স্ট্রাইক প্রাইস এবং মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখের একটি কল অপশন এবং একটি পুট অপশন একসাথে কেনেন। এই দুটি অপশনের জন্য একত্রে একটি প্রিমিয়াম দিতে হয়, যা স্ট্র্যাডলের খরচ।

উদাহরণস্বরূপ, ধরা যাক বিটকয়েনের দাম বর্তমানে $30,000। একজন বিনিয়োগকারী $30,000 স্ট্রাইক প্রাইসের সাথে একটি কল অপশন এবং একটি পুট অপশন কিনলেন, যার মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ এক মাস পরে। কল অপশনের প্রিমিয়াম $1,000 এবং পুট অপশনের প্রিমিয়াম $1,000। সুতরাং, স্ট্র্যাডলের মোট খরচ হবে $2,000।

এখন, যদি এক মাস পর বিটকয়েনের দাম $35,000 হয়, তাহলে কল অপশনটি $5,000 লাভে বিক্রি করা যাবে ($35,000 - $30,000 = $5,000)। পুট অপশনটি মূল্যহীন হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে, বিনিয়োগকারীর মোট লাভ হবে $5,000 - $2,000 (স্ট্র্যাডলের খরচ) = $3,000।

অন্যদিকে, যদি বিটকয়েনের দাম $25,000 হয়, তাহলে পুট অপশনটি $5,000 লাভে বিক্রি করা যাবে ($30,000 - $25,000 = $5,000)। কল অপশনটি মূল্যহীন হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে, বিনিয়োগকারীর মোট লাভ হবে $5,000 - $2,000 (স্ট্র্যাডলের খরচ) = $3,000।

যদি বিটকয়েনের দাম $30,000-এর কাছাকাছি থাকে, তাহলে উভয় অপশনই মূল্যহীন হয়ে যেতে পারে, এবং বিনিয়োগকারী স্ট্র্যাডলের জন্য প্রদত্ত প্রিমিয়াম হারাতে পারেন।

স্ট্র্যাডলের প্রকারভেদ

স্ট্র্যাডল বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যা বিনিয়োগকারীর প্রত্যাশা এবং ঝুঁকির মাত্রার উপর নির্ভর করে। নিচে কয়েকটি প্রধান প্রকার আলোচনা করা হলো:

১. লং স্ট্র্যাডল (Long Straddle): এটি সবচেয়ে সাধারণ প্রকার, যেখানে কল এবং পুট উভয় অপশন কেনা হয়। এটি ব্যবহার করা হয় যখন দামের বড় ধরনের পরিবর্তনের আশা করা হয়, কিন্তু কোন দিকে যাবে তা নিশ্চিত নয়।

২. শর্ট স্ট্র্যাডল (Short Straddle): এই ক্ষেত্রে, কল এবং পুট উভয় অপশন বিক্রি করা হয়। এটি ব্যবহার করা হয় যখন দাম স্থিতিশীল থাকার আশা করা হয়।

৩. ডায়াগোনাল স্ট্র্যাডল (Diagonal Straddle): এই স্ট্র্যাডলে, কল এবং পুট অপশনের স্ট্রাইক প্রাইস এবং মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ ভিন্ন হয়।

স্ট্র্যাডলের সুবিধা

  • উচ্চ লাভের সম্ভাবনা: দাম উল্লেখযোগ্যভাবে ওঠানামা করলে স্ট্র্যাডল থেকে উচ্চ লাভ করা যেতে পারে।
  • দিকনির্দেশনার স্বাধীনতা: দাম কোন দিকে যাবে তা জানার প্রয়োজন নেই, কেবল বড় ধরনের পরিবর্তন হলেই লাভ।
  • ঝুঁকি সীমিত: স্ট্র্যাডলের সর্বোচ্চ ক্ষতি হলো প্রদত্ত প্রিমিয়াম।

স্ট্র্যাডলের অসুবিধা

  • প্রিমিয়ামের খরচ: স্ট্র্যাডল তৈরি করতে প্রিমিয়াম দিতে হয়, যা একটি খরচ।
  • সময় ক্ষয়: অপশনের মেয়াদ উত্তীর্ণের সাথে সাথে এর মূল্য হ্রাস পায়, যা স্ট্র্যাডলের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
  • নির্ভরযোগ্যতা: দামের পরিবর্তন যথেষ্ট বেশি না হলে, স্ট্র্যাডল লাভজনক নাও হতে পারে।

ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেটে স্ট্র্যাডল ব্যবহারের নিয়মাবলী

ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেট অত্যন্ত উদ্বায়ী হওয়ায়, এখানে স্ট্র্যাডল ব্যবহারের কিছু বিশেষ নিয়মাবলী অনুসরণ করা উচিত:

১. মার্কেট বিশ্লেষণ: ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেটের ভোল্যাটিলিটি এবং সম্ভাব্য মুভমেন্ট সম্পর্কে ভালোভাবে ধারণা রাখতে হবে। টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস এবং ফান্ডামেন্টাল অ্যানালাইসিস ব্যবহার করে মার্কেটের গতিবিধি বোঝার চেষ্টা করতে হবে।

২. ঝুঁকির ব্যবস্থাপনা: স্ট্র্যাডল একটি ঝুঁকিপূর্ণ কৌশল, তাই বিনিয়োগের পরিমাণ সীমিত রাখতে হবে। আপনার মোট ট্রেডিং ক্যাপিটালের একটি ছোট অংশই স্ট্র্যাডলে বিনিয়োগ করা উচিত।

৩. সঠিক স্ট্রাইক প্রাইস নির্বাচন: স্ট্রাইক প্রাইস এমনভাবে নির্বাচন করতে হবে, যাতে দামের সামান্য পরিবর্তনেও লাভ করার সম্ভাবনা থাকে।

৪. মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ: মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ এমনভাবে নির্বাচন করতে হবে, যাতে দামের বড় ধরনের পরিবর্তন হওয়ার জন্য যথেষ্ট সময় থাকে।

৫. ট্রেডিং ভলিউম: যে ক্রিপ্টোকারেন্সিতে স্ট্র্যাডল করছেন, সেটির ট্রেডিং ভলিউম পর্যাপ্ত কিনা, তা দেখে নিতে হবে। কম ভলিউমের বাজারে অপশন ট্রেড করা কঠিন হতে পারে।

৬. প্ল্যাটফর্ম নির্বাচন: নির্ভরযোগ্য এবং সুরক্ষিত ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে হবে, যেখানে অপশন ট্রেডিংয়ের সুবিধা আছে।

স্ট্র্যাডল এবং অন্যান্য অপশন কৌশল

স্ট্র্যাডলের পাশাপাশি আরও অনেক অপশন ট্রেডিং কৌশল রয়েছে। এদের মধ্যে কয়েকটি নিচে উল্লেখ করা হলো:

  • কভার্ড কল (Covered Call): এই কৌশলটি সাধারণত স্টক বা ক্রিপ্টোকারেন্সি হোল্ডাররা ব্যবহার করেন অতিরিক্ত আয় করার জন্য। কভার্ড কল
  • প্রোটেক্টিভ পুট (Protective Put): এটি বিনিয়োগকারীদের তাদের পোর্টফোলিওকে ডাউনসাইড ঝুঁকি থেকে রক্ষা করে। প্রোটেক্টিভ পুট
  • বাটারফ্লাই স্প্রেড (Butterfly Spread): এই কৌশলটি কম ভোল্যাটিলিটির পরিস্থিতিতে লাভজনক। বাটারফ্লাই স্প্রেড
  • কন্ডর স্প্রেড (Condor Spread): এটি বাটারফ্লাই স্প্রেডের মতোই, তবে আরও বেশি নমনীয়। কন্ডর স্প্রেড
  • আয়রন কন্ডর (Iron Condor): এটি একটি নিরপেক্ষ কৌশল, যা কম ভোল্যাটিলিটির পরিস্থিতিতে ব্যবহার করা হয়। আয়রন কন্ডর

ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেটে স্ট্র্যাডল ব্যবহারের উদাহরণ

বিটকয়েনের (BTC) দাম $60,000-এ স্থিতিশীল আছে। একজন বিনিয়োগকারী মনে করেন যে আসন্ন দিনগুলোতে বিটকয়েনের দামে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে, কিন্তু কোন দিকে যাবে তা নিশ্চিত নন। তাই তিনি $60,000 স্ট্রাইক প্রাইসের একটি কল অপশন এবং একটি পুট অপশন কেনেন, যার মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ এক মাস পরে। প্রতিটি অপশনের প্রিমিয়াম $500।

যদি এক মাস পর বিটকয়েনের দাম $70,000 হয়, তাহলে কল অপশনটি $10,000 লাভে বিক্রি করা যাবে। পুট অপশনটি মূল্যহীন হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে, বিনিয়োগকারীর মোট লাভ হবে $10,000 - $1,000 (স্ট্র্যাডলের খরচ) = $9,000।

অন্যদিকে, যদি বিটকয়েনের দাম $50,000 হয়, তাহলে পুট অপশনটি $10,000 লাভে বিক্রি করা যাবে। কল অপশনটি মূল্যহীন হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে, বিনিয়োগকারীর মোট লাভ হবে $10,000 - $1,000 (স্ট্র্যাডলের খরচ) = $9,000।

উপসংহার

স্ট্র্যাডল একটি শক্তিশালী অপশন ট্রেডিং কৌশল, যা ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেটে লাভ করার সুযোগ করে দিতে পারে। তবে, এটি একটি জটিল কৌশল এবং এর সাথে জড়িত ঝুঁকিগুলো ভালোভাবে বুঝতে হবে। সঠিক পরিকল্পনা, মার্কেট বিশ্লেষণ এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে স্ট্র্যাডল ব্যবহার করে ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেডিংয়ে সাফল্য অর্জন করা সম্ভব।

আরও জানতে:

স্ট্র্যাডলের সুবিধা ও অসুবিধা
সুবিধা
উচ্চ লাভের সম্ভাবনা দিকনির্দেশনার স্বাধীনতা ঝুঁকি সীমিত


সুপারিশকৃত ফিউচার্স ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম

প্ল্যাটফর্ম ফিউচার্স বৈশিষ্ট্য নিবন্ধন
Binance Futures 125x পর্যন্ত লিভারেজ, USDⓈ-M চুক্তি এখনই নিবন্ধন করুন
Bybit Futures চিরস্থায়ী বিপরীত চুক্তি ট্রেডিং শুরু করুন
BingX Futures কপি ট্রেডিং BingX এ যোগদান করুন
Bitget Futures USDT দ্বারা সুরক্ষিত চুক্তি অ্যাকাউন্ট খুলুন
BitMEX ক্রিপ্টোকারেন্সি প্ল্যাটফর্ম, 100x পর্যন্ত লিভারেজ BitMEX

আমাদের কমিউনিটির সাথে যোগ দিন

@strategybin টেলিগ্রাম চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন আরও তথ্যের জন্য। সেরা লাভজনক প্ল্যাটফর্ম – এখনই নিবন্ধন করুন

আমাদের কমিউনিটিতে অংশ নিন

@cryptofuturestrading টেলিগ্রাম চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন বিশ্লেষণ, বিনামূল্যে সংকেত এবং আরও অনেক কিছু পেতে!