স্টপ লস না ব্যবহার করা
স্টপ লস না ব্যবহার করা
ভূমিকা ক্রিপ্টোকারেন্সি ফিউচার্স ট্রেডিং একটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়। এখানে বিনিয়োগকারীরা খুব অল্প সময়ে অনেক বেশি লাভ করতে পারলেও, ক্ষতির সম্ভাবনাও অনেক বেশি। এই ঝুঁকি কমাতে অভিজ্ঞ ট্রেডাররা সাধারণত স্টপ লস ব্যবহার করেন। কিন্তু কিছু ট্রেডার আছেন যারা স্টপ লস ব্যবহার করেন না। স্টপ লস ব্যবহার না করার কিছু কারণ থাকতে পারে, তবে এর সঙ্গে জড়িত ঝুঁকিগুলো সম্পর্কে ভালোভাবে জানা জরুরি। এই নিবন্ধে, স্টপ লস ব্যবহার না করার কারণ, সুবিধা, অসুবিধা এবং সম্ভাব্য বিকল্প নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
স্টপ লস কী? স্টপ লস হলো একটি নির্দিষ্ট মূল্যস্তর, যেখানে পৌঁছালে আপনার ট্রেড স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। এর মাধ্যমে আপনি আপনার সম্ভাব্য ক্ষতি সীমিত করতে পারেন। ধরুন, আপনি একটি বিটকয়েন ফিউচার্স কন্ট্রাক্ট $30,000-এ কিনেছেন এবং আপনি মনে করেন যে $29,000-এর নিচে দাম গেলে আপনার বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনি $29,000-এ একটি স্টপ লস অর্ডার সেট করতে পারেন। যদি বাজার $29,000-এ পৌঁছায়, তাহলে আপনার কন্ট্রাক্টটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিক্রি হয়ে যাবে, যা আপনার ক্ষতি $1,000-এর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখবে। ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো স্টপ লস।
স্টপ লস ব্যবহার না করার কারণ কিছু ট্রেডার স্টপ লস ব্যবহার করেন না, তাদের কিছু কারণ নিচে উল্লেখ করা হলো:
১. বাজারের অস্থিরতা: ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজার অত্যন্ত অস্থির। এখানে দাম খুব দ্রুত ওঠানামা করে। স্টপ লস অর্ডার সেট করলে, সামান্য দামের ওঠানামার কারণেও আপনার ট্রেড বন্ধ হয়ে যেতে পারে, এমনকি এটি লাভের দিকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও।
২. মূল্য ম্যানিপুলেশন: কিছু সময় অসাধু ট্রেডাররা ইচ্ছাকৃতভাবে দাম কমিয়ে স্টপ লস অর্ডারগুলো ট্রিগার করে দেয়, যাতে তারা কম দামে কেনা করতে পারে। একে মূল্য ম্যানিপুলেশন বলা হয়।
৩. দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ: দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগকারীরা মনে করেন যে বাজারের স্বল্পমেয়াদী ওঠানামা তাদের বিনিয়োগের লক্ষ্যকে প্রভাবিত করবে না। তাই তারা স্টপ লস ব্যবহার করেন না।
৪. ট্রেডিং কৌশল: কিছু বিশেষ ট্রেডিং কৌশল আছে, যেখানে স্টপ লস ব্যবহার করা উপযুক্ত নয়। যেমন, কিছু স্কাল্পিং কৌশল বা নিউজ ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন হয়।
৫. মানসিক কারণ: কিছু ট্রেডার মনে করেন যে স্টপ লস ব্যবহার করলে তারা বাজারের গতিবিধি থেকে নিজেদের সরিয়ে নেন এবং লাভের সুযোগ হারান।
স্টপ লস ব্যবহার না করার সুবিধা স্টপ লস ব্যবহার না করার কিছু সুবিধা রয়েছে, যা নিচে দেওয়া হলো:
১. লাভের সম্ভাবনা বৃদ্ধি: স্টপ লস ব্যবহার না করলে, আপনি বাজারের বড় মুভমেন্ট থেকে লাভবান হওয়ার সুযোগ পান। যদি আপনার ধারণা সঠিক হয়, তাহলে আপনি অনেক বেশি লাভ করতে পারবেন।
২. অপ্রয়োজনীয় ট্রেড বন্ধ হওয়া থেকে মুক্তি: বাজারের স্বাভাবিক ওঠানামার কারণে স্টপ লস ট্রিগার হয়ে ট্রেড বন্ধ হয়ে গেলে, আপনি সম্ভাব্য লাভ থেকে বঞ্চিত হতে পারেন। স্টপ লস ব্যবহার না করলে এই ঝুঁকি এড়ানো যায়।
৩. দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ: স্টপ লস ব্যবহার না করলে, আপনি বাজারের পরিস্থিতি অনুযায়ী দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন এবং আপনার ট্রেড ধরে রাখতে পারবেন।
স্টপ লস ব্যবহার না করার অসুবিধা স্টপ লস ব্যবহার না করার কিছু বড় অসুবিধা রয়েছে, যা আপনার বিনিয়োগের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে:
১. বড় ক্ষতির ঝুঁকি: স্টপ লস ব্যবহার না করলে, বাজার আপনার প্রতিকূলে গেলে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন। কোনো অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটলে আপনার সম্পূর্ণ বিনিয়োগ হারানোর সম্ভাবনা থাকে। ক্ষতি হ্রাস করার জন্য স্টপ লস খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
২. মানসিক চাপ: স্টপ লস ব্যবহার না করলে, আপনাকে সবসময় বাজারের দিকে নজর রাখতে হয় এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এতে মানসিক চাপ অনেক বেড়ে যায়।
৩. আবেগপ্রবণ সিদ্ধান্ত: ক্ষতির ভয়ে অনেক ট্রেডার আবেগপ্রবণ হয়ে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন, যা তাদের আরও বড় ক্ষতির দিকে ঠেলে দেয়।
৪. সুযোগ হারানো: স্টপ লস ব্যবহার না করার কারণে আপনি বাজারের ভালো সুযোগগুলোও হারাতে পারেন।
স্টপ লসের বিকল্প যদি আপনি স্টপ লস ব্যবহার করতে না চান, তাহলে কিছু বিকল্প কৌশল অবলম্বন করতে পারেন:
১. ট্রেইলিং স্টপ লস: ট্রেইলিং স্টপ লস হলো এমন একটি কৌশল, যেখানে স্টপ লস অর্ডারটি দামের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়। যখন দাম বাড়ে, তখন স্টপ লসও বাড়ে, এবং যখন দাম কমে, তখন স্টপ লসও কমে। এটি আপনার লাভকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে।
২. সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল: সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল ব্যবহার করে আপনি আপনার ট্রেডের জন্য একটি নির্দিষ্ট মূল্যস্তর নির্ধারণ করতে পারেন। এই লেভেলগুলোর কাছাকাছি আপনি আপনার ট্রেড বন্ধ করার কথা বিবেচনা করতে পারেন।
৩. মুভিং এভারেজ: মুভিং এভারেজ হলো একটি টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর, যা আপনাকে বাজারের গড় মূল্য বুঝতে সাহায্য করে। আপনি মুভিং এভারেজের উপর ভিত্তি করে আপনার ট্রেড বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
৪. পজিশন সাইজিং: পজিশন সাইজিং হলো আপনার ট্রেডের আকার নির্ধারণ করা। আপনি আপনার বিনিয়োগের একটি ছোট অংশ দিয়ে ট্রেড করলে, ক্ষতির পরিমাণ সীমিত রাখতে পারবেন।
৫. ডাইভার্সিফিকেশন: ডাইভার্সিফিকেশন হলো আপনার বিনিয়োগকে বিভিন্ন অ্যাসেটের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া। এতে কোনো একটি অ্যাসেটের দাম কমলেও আপনার সামগ্রিক বিনিয়োগের উপর তেমন প্রভাব পড়বে না।
৬. হেকজ রেশিও: হেকজ রেশিও ব্যবহার করে আপনি আপনার সম্ভাব্য লাভ এবং ক্ষতির অনুপাত নির্ধারণ করতে পারেন। এটি আপনাকে আরও ভালোভাবে ঝুঁকি মূল্যায়ন করতে সাহায্য করে।
৭. ভলিউম অ্যানালাইসিস: ভলিউম অ্যানালাইসিস করে আপনি বাজারের গতিবিধি এবং সম্ভাব্য ট্রেন্ড সম্পর্কে ধারণা পেতে পারেন।
৮. ফান্ডামেন্টাল অ্যানালাইসিস: ফান্ডামেন্টাল অ্যানালাইসিস করে আপনি কোনো ক্রিপ্টোকারেন্সির অন্তর্নিহিত মূল্য বুঝতে পারবেন এবং সেই অনুযায়ী ট্রেড করতে পারবেন।
৯. সেন্টমেন্ট অ্যানালাইসিস: সেন্টমেন্ট অ্যানালাইসিস করে আপনি মার্কেটের সামগ্রিক অনুভূতি বুঝতে পারবেন, যা আপনাকে ট্রেডিং সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।
১০. এলিয়ট ওয়েভ থিওরি: এলিয়ট ওয়েভ থিওরি ব্যবহার করে আপনি বাজারের দীর্ঘমেয়াদী প্রবণতা বিশ্লেষণ করতে পারেন।
১১. ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট: ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট লেভেলগুলো ব্যবহার করে আপনি সম্ভাব্য সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেলগুলো চিহ্নিত করতে পারেন।
১২. বুলিংগার ব্যান্ডস: বুলিংগার ব্যান্ডস ব্যবহার করে আপনি বাজারের অস্থিরতা পরিমাপ করতে পারেন এবং সম্ভাব্য ব্রেকআউটগুলো চিহ্নিত করতে পারেন।
১৩. রিলেটিভ স্ট্রেন্থ ইনডেক্স (RSI): রিলেটিভ স্ট্রেন্থ ইনডেক্স (RSI) ব্যবহার করে আপনি ওভারবট এবং ওভারসোল্ড কন্ডিশনগুলো সনাক্ত করতে পারেন।
১৪. MACD: MACD (Moving Average Convergence Divergence) একটি ট্রেন্ড-ফলোয়িং মোমেন্টাম ইন্ডিকেটর, যা আপনি সম্ভাব্য ট্রেডিং সিগন্যাল সনাক্ত করতে ব্যবহার করতে পারেন।
১৫. ইচিঙ্কৌ ক্লাউড: ইচিঙ্কৌ ক্লাউড একটি বহুমুখী টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর, যা সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল, ট্রেন্ড ডিরেকশন এবং মোমেন্টাম সনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয়।
ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব ক্রিপ্টোকারেন্সি ফিউচার্স ট্রেডিংয়ে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্টপ লস ব্যবহার করা বা না করা আপনার ব্যক্তিগত ট্রেডিং কৌশলের উপর নির্ভর করে, তবে ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি। আপনি যদি স্টপ লস ব্যবহার না করেন, তাহলে আপনার পজিশন সাইজিং এবং অন্যান্য ঝুঁকি কমানোর কৌশলগুলো আরও কঠোরভাবে অনুসরণ করা উচিত।
উপসংহার স্টপ লস ব্যবহার না করা একটি বিতর্কিত বিষয়। এর কিছু সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে। যদি আপনি স্টপ লস ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে আপনাকে বাজারের ঝুঁকি সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে এবং বিকল্প ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার কৌশলগুলো অবলম্বন করতে হবে। মনে রাখবেন, সফল ট্রেডিংয়ের জন্য সঠিক পরিকল্পনা এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার বিকল্প নেই।
আরও জানতে:
- ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেডিং
- ফিউচার্স কন্ট্রাক্ট
- মার্জিন ট্রেডিং
- টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস
- ফান্ডামেন্টাল অ্যানালাইসিস
- ট্রেডিং সাইকোলজি
- বাজারের পূর্বাভাস
- পোর্টফোলিও ব্যবস্থাপনা
- ট্যাক্স এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি
- ক্রিপ্টোকারেন্সি নিরাপত্তা
- ব্লকচেইন প্রযুক্তি
- ডিপাই (DeFi)
- এনএফটি (NFT)
- মেটাভার্স
- ওয়েব ৩.০
- ক্রিপ্টোকারেন্সি রেগুলেশন
- ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম
- অ্যালগরিদমিক ট্রেডিং
- হাই-ফ্রিকোয়েন্সি ট্রেডিং
- আর্বিট্রেজ
কারণ: স্টপ লস ব্যবহার না করার ঝুঁকি এবং এর বিকল্প নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
সুপারিশকৃত ফিউচার্স ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম
প্ল্যাটফর্ম | ফিউচার্স বৈশিষ্ট্য | নিবন্ধন |
---|---|---|
Binance Futures | 125x পর্যন্ত লিভারেজ, USDⓈ-M চুক্তি | এখনই নিবন্ধন করুন |
Bybit Futures | চিরস্থায়ী বিপরীত চুক্তি | ট্রেডিং শুরু করুন |
BingX Futures | কপি ট্রেডিং | BingX এ যোগদান করুন |
Bitget Futures | USDT দ্বারা সুরক্ষিত চুক্তি | অ্যাকাউন্ট খুলুন |
BitMEX | ক্রিপ্টোকারেন্সি প্ল্যাটফর্ম, 100x পর্যন্ত লিভারেজ | BitMEX |
আমাদের কমিউনিটির সাথে যোগ দিন
@strategybin টেলিগ্রাম চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন আরও তথ্যের জন্য। সেরা লাভজনক প্ল্যাটফর্ম – এখনই নিবন্ধন করুন।
আমাদের কমিউনিটিতে অংশ নিন
@cryptofuturestrading টেলিগ্রাম চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন বিশ্লেষণ, বিনামূল্যে সংকেত এবং আরও অনেক কিছু পেতে!