লং টার্ম ট্রেন্ড ফলোয়িং

cryptofutures.trading থেকে
পরিভ্রমণে চলুন অনুসন্ধানে চলুন

লং টার্ম ট্রেন্ড ফলোয়িং

ভূমিকা

লং টার্ম ট্রেন্ড ফলোয়িং (Long Term Trend Following) একটি বিনিয়োগ কৌশল যা দীর্ঘমেয়াদী প্রবণতা চিহ্নিত করে সেই অনুযায়ী ট্রেড করার ওপর ভিত্তি করে গঠিত। এই পদ্ধতিতে, বিনিয়োগকারীরা বাজারের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে এবং একটি নির্দিষ্ট দিকে বাজারের দীর্ঘমেয়াদী মুভমেন্ট অনুসরণ করে। এই কৌশলটি স্বল্পমেয়াদী বাজারের ওঠানামা বা "নয়েজ" উপেক্ষা করে দীর্ঘমেয়াদী লাভের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেটে, যেখানে অস্থিরতা অনেক বেশি, সেখানে এই কৌশলটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।

ট্রেন্ড ফলোয়িং এর মূল ধারণা

ট্রেন্ড ফলোয়িং কৌশলটি এই ধারণার ওপর ভিত্তি করে তৈরি যে, একবার কোনো সম্পদ একটি নির্দিষ্ট দিকে (ঊর্ধ্বমুখী বা নিম্নমুখী) চলতে শুরু করলে, সেটি কিছু সময়ের জন্য সেই দিকেই চলতে থাকবে। এই কৌশল ব্যবহার করে, বিনিয়োগকারীরা সেই প্রবণতাকে কাজে লাগিয়ে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করেন।

লং টার্ম ট্রেডিং এবং শর্ট টার্ম ট্রেডিং এর মধ্যে পার্থক্য

  • লং টার্ম ট্রেডিং:* এই পদ্ধতিতে বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘ সময়ের জন্য (কয়েক মাস থেকে কয়েক বছর) কোনো সম্পদ ধরে রাখেন। তাঁরা বাজারের দীর্ঘমেয়াদী প্রবণতা অনুসরণ করেন এবং স্বল্পমেয়াদী ওঠানামা দ্বারা প্রভাবিত হন না। দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ এর মূল লক্ষ্য হলো সময়ের সাথে সাথে সম্পদের মূল্যের বৃদ্ধি থেকে লাভবান হওয়া।
  • শর্ট টার্ম ট্রেডিং:* এই পদ্ধতিতে বিনিয়োগকারীরা স্বল্প সময়ের জন্য (কয়েক মিনিট থেকে কয়েক দিন) কোনো সম্পদ কেনেন এবং বিক্রি করেন। তাঁরা বাজারের স্বল্পমেয়াদী ওঠানামা থেকে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করেন। ডে ট্রেডিং এবং সুইং ট্রেডিং হলো শর্ট টার্ম ট্রেডিংয়ের উদাহরণ।

লং টার্ম ট্রেন্ড ফলোয়িং কৌশল কেন গুরুত্বপূর্ণ?

ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেটে, দামের আকস্মিক পরিবর্তন একটি সাধারণ ঘটনা। এমন পরিস্থিতিতে, লং টার্ম ট্রেন্ড ফলোয়িং কৌশল বিনিয়োগকারীদের শান্ত থাকতে এবং আবেগপ্রবণ সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বিরত থাকতে সাহায্য করে। এই কৌশলটি বাজারের দীর্ঘমেয়াদী সম্ভাবনাকে মূল্যায়ন করতে এবং সেই অনুযায়ী বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করে।

লং টার্ম ট্রেন্ড কিভাবে সনাক্ত করতে হয়?

লং টার্ম ট্রেন্ড সনাক্ত করার জন্য বিভিন্ন ধরনের টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস টুলস এবং ইন্ডিকেটর ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে কিছু জনপ্রিয় পদ্ধতি নিচে উল্লেখ করা হলো:

১. মুভিং এভারেজ (Moving Average): মুভিং এভারেজ একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পদের গড় মূল্য দেখায়। এটি বাজারের প্রবণতা নির্ধারণ করতে সহায়ক। উদাহরণস্বরূপ, ২০০ দিনের মুভিং এভারেজ একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রবণতা নির্দেশ করতে পারে। মুভিং এভারেজ ব্যবহার করে বাজারের গতিবিধি বোঝা যায়।

২. ট্রেন্ড লাইন (Trend Line): ট্রেন্ড লাইন হলো একটি চার্টের ওপর আঁকা সরলরেখা যা সম্পদের দামের ঊর্ধ্বমুখী বা নিম্নমুখী প্রবণতা দেখায়। এই লাইনগুলো সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল নির্ধারণ করতে সাহায্য করে। সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স নির্ধারণ করা ট্রেডিংয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

৩. রিলেটিভ স্ট্রেন্থ ইনডেক্স (RSI): RSI একটি মোমেন্টাম ইন্ডিকেটর যা সম্পদের অতিরিক্ত ক্রয় বা অতিরিক্ত বিক্রয়ের অবস্থা নির্দেশ করে। এটি সাধারণত ০ থেকে ১০০ এর মধ্যে থাকে। RSI এর মাধ্যমে বাজারের গতিবিধি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

৪. ম্যাকডি (MACD): MACD হলো মুভিং এভারেজ কনভারজেন্স ডাইভারজেন্সের একটি ইন্ডিকেটর। এটি দুটি মুভিং এভারেজের মধ্যে সম্পর্ক দেখায় এবং বাজারের প্রবণতা পরিবর্তন সম্পর্কে সংকেত দেয়। MACডি একটি জনপ্রিয় টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর।

৫. ভলিউম অ্যানালাইসিস (Volume Analysis): ভলিউম অ্যানালাইসিস হলো ট্রেডিং ভলিউমের ওপর ভিত্তি করে বাজারের প্রবণতা বিশ্লেষণ করা। যদি দাম বাড়তে থাকে এবং ভলিউমও বৃদ্ধি পায়, তবে এটি একটি শক্তিশালী ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা নির্দেশ করে। ভলিউম বিশ্লেষণ বাজারের গতিবিধি বুঝতে সহায়ক।

৬. চার্ট প্যাটার্ন (Chart Pattern): বিভিন্ন ধরনের চার্ট প্যাটার্ন, যেমন হেড অ্যান্ড শোল্ডারস (Head and Shoulders), ডাবল টপ (Double Top) এবং ডাবল বটম (Double Bottom), দীর্ঘমেয়াদী প্রবণতা সনাক্ত করতে সাহায্য করে। চার্ট প্যাটার্নগুলো ট্রেডারদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংকেত প্রদান করে।

ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা

লং টার্ম ট্রেন্ড ফলোয়িং কৌশল ব্যবহার করার সময় ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার টিপস নিচে দেওয়া হলো:

১. স্টপ-লস অর্ডার (Stop-Loss Order): স্টপ-লস অর্ডার ব্যবহার করে সম্ভাব্য ক্ষতি সীমিত করা যায়। যদি দাম আপনার প্রত্যাশার বিপরীতে যায়, তবে স্টপ-লস অর্ডার স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার সম্পদ বিক্রি করে দেবে। স্টপ-লস অর্ডার ব্যবহার করে মূলধন সুরক্ষিত রাখা যায়।

২. পজিশন সাইজিং (Position Sizing): আপনার মোট বিনিয়োগের একটি ছোট অংশ দিয়ে ট্রেড করুন। এতে কোনো একটি ট্রেডে বড় ধরনের ক্ষতি হলেও আপনার সামগ্রিক বিনিয়োগে তেমন প্রভাব পড়বে না। পজিশন সাইজিং একটি গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার কৌশল।

৩. ডাইভারসিফিকেশন (Diversification): আপনার বিনিয়োগ পোর্টফোলিওতে বিভিন্ন ধরনের সম্পদ অন্তর্ভুক্ত করুন। এতে কোনো একটি সম্পদের দাম কমলেও আপনার সামগ্রিক পোর্টফোলিও স্থিতিশীল থাকবে। ডাইভারসিফিকেশন ঝুঁকির প্রভাব কমায়।

৪. নিয়মিত পর্যবেক্ষণ (Regular Monitoring): আপনার বিনিয়োগ নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করুন এবং বাজারের পরিবর্তনের সাথে সাথে আপনার কৌশলটি সংশোধন করুন। পোর্টফোলিও পর্যবেক্ষণ বিনিয়োগের জন্য জরুরি।

ক্রিপ্টোকারেন্সিতে লং টার্ম ট্রেন্ড ফলোয়িং এর উদাহরণ

বিটকয়েন (Bitcoin): বিটকয়েনের দীর্ঘমেয়াদী চার্ট দেখলে দেখা যায় যে এটি সাধারণত বুল মার্কেট (Uptrend) এবং বিয়ার মার্কেট (Downtrend) এর মধ্যে ওঠানামা করে। একজন ট্রেন্ড ফলোয়ার বিটকয়েনের দীর্ঘমেয়াদী ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা অনুসরণ করে লাভবান হতে পারেন।

ইথেরিয়াম (Ethereum): ইথেরিয়ামের ক্ষেত্রেও একই রকমভাবে ট্রেন্ড ফলোয়িং কৌশল প্রয়োগ করা যেতে পারে। ইথেরিয়ামের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং ব্যবহার বৃদ্ধির সাথে সাথে এর দাম দীর্ঘমেয়াদে বাড়তে পারে।

অন্যান্য অল্টকয়েন (Altcoins): অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সি, যেমন রিপল (Ripple), লাইটকয়েন (Litecoin) এবং কার্ডানো (Cardano)-এর ক্ষেত্রেও লং টার্ম ট্রেন্ড ফলোয়িং কৌশল ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে, অল্টকয়েনগুলির ক্ষেত্রে ঝুঁকি বেশি থাকে, তাই সতর্কতার সাথে বিনিয়োগ করা উচিত।

কিছু অতিরিক্ত টিপস

  • ধৈর্য ধরুন: লং টার্ম ট্রেন্ড ফলোয়িং কৌশলটি সময়সাপেক্ষ। দ্রুত লাভের আশা না করে ধৈর্য ধরে বাজারের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করুন।
  • আবেগ নিয়ন্ত্রণ করুন: বাজারের ওঠানামায় আবেগপ্রবণ হয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না।
  • গবেষণা করুন: বিনিয়োগ করার আগে ভালোভাবে গবেষণা করুন এবং বাজারের মূল বিষয়গুলো বোঝার চেষ্টা করুন।
  • শেখা চালিয়ে যান: ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেট প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে, তাই নতুন কৌশল এবং তথ্য সম্পর্কে জানার চেষ্টা করুন।

উপসংহার

লং টার্ম ট্রেন্ড ফলোয়িং একটি কার্যকর বিনিয়োগ কৌশল হতে পারে, বিশেষ করে ক্রিপ্টোকারেন্সির মতো অস্থির বাজারে। তবে, এই কৌশলটি সফলভাবে প্রয়োগ করার জন্য বাজারের সঠিক বিশ্লেষণ, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং ধৈর্যের প্রয়োজন। বিনিয়োগ করার আগে নিজের গবেষণা করুন এবং একজন আর্থিক উপদেষ্টার পরামর্শ নিন।

আরও জানতে:


সুপারিশকৃত ফিউচার্স ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম

প্ল্যাটফর্ম ফিউচার্স বৈশিষ্ট্য নিবন্ধন
Binance Futures 125x পর্যন্ত লিভারেজ, USDⓈ-M চুক্তি এখনই নিবন্ধন করুন
Bybit Futures চিরস্থায়ী বিপরীত চুক্তি ট্রেডিং শুরু করুন
BingX Futures কপি ট্রেডিং BingX এ যোগদান করুন
Bitget Futures USDT দ্বারা সুরক্ষিত চুক্তি অ্যাকাউন্ট খুলুন
BitMEX ক্রিপ্টোকারেন্সি প্ল্যাটফর্ম, 100x পর্যন্ত লিভারেজ BitMEX

আমাদের কমিউনিটির সাথে যোগ দিন

@strategybin টেলিগ্রাম চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন আরও তথ্যের জন্য। সেরা লাভজনক প্ল্যাটফর্ম – এখনই নিবন্ধন করুন

আমাদের কমিউনিটিতে অংশ নিন

@cryptofuturestrading টেলিগ্রাম চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন বিশ্লেষণ, বিনামূল্যে সংকেত এবং আরও অনেক কিছু পেতে!