মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি

cryptofutures.trading থেকে
পরিভ্রমণে চলুন অনুসন্ধানে চলুন

মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি

ভূমিকা: মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ধারণা, যা কোনো নির্দিষ্ট অর্থনীতিতে বিদ্যমান মুদ্রার মোট পরিমাণকে বোঝায়। এই পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে মুদ্রাস্ফীতি-র (Inflation) সৃষ্টি হতে পারে, যা দ্রব্যমূল্য এবং পরিষেবার খরচ বাড়িয়ে দেয়। এই নিবন্ধে, মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধির কারণ, প্রভাব এবং এটি কীভাবে ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজারকে প্রভাবিত করে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি কী? মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি বলতে বোঝায়, একটি দেশের অর্থ কর্তৃপক্ষ (সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংক) কর্তৃক বাজারে অর্থের পরিমাণ বাড়ানো। এই কাজটি বিভিন্ন উপায়ে করা যেতে পারে, যেমন - নতুন নোট ছাপানো, ঋণের হার কমানো, বা বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য রিজার্ভের প্রয়োজনীয়তা হ্রাস করা।

মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধির কারণসমূহ: বিভিন্ন কারণে মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি পেতে পারে। নিচে কয়েকটি প্রধান কারণ আলোচনা করা হলো:

১. অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি: যখন একটি দেশের অর্থনীতি দ্রুত বাড়তে থাকে, তখন চাহিদা মেটাতে অর্থের সরবরাহ বাড়ানো হয়। ২. সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি: সরকার যখন বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে বেশি অর্থ খরচ করে, তখন বাজারে মুদ্রা সরবরাহ বাড়ে। ৩. সুদের হার হ্রাস: কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার কমালে, মানুষ ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে উৎসাহিত হয়, যা মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি করে। ৪. বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণদান: বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো যখন বেশি পরিমাণে ঋণ দেয়, তখন বাজারে অর্থের জোগান বাড়ে। ৫. বৈদেশিক বিনিয়োগ: বিদেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশে অর্থ আসলে, মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি পায়। ৬. কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যক্রম: কেন্দ্রীয় ব্যাংক খোলা বাজার কার্যক্রম (Open Market Operations)-এর মাধ্যমে বন্ড কিনে বা বিক্রি করে মুদ্রা সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে। বন্ড কিনলে বাজারে অর্থের সরবরাহ বাড়ে।

মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধির প্রভাব: মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধির ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুটো প্রভাবই থাকতে পারে।

ইতিবাচক প্রভাব:

  • অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি: অর্থের সরবরাহ বাড়লে বিনিয়োগ এবং উৎপাদন বাড়ে, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সহায়ক।
  • কর্মসংস্থান সৃষ্টি: নতুন বিনিয়োগের ফলে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
  • ঋণের সহজলভ্যতা: সুদের হার কম হলে ঋণ পাওয়া সহজ হয়, যা ব্যবসা এবং ব্যক্তিগত উন্নয়নে সাহায্য করে।

নেতিবাচক প্রভাব:

  • মুদ্রাস্ফীতি: অতিরিক্ত মুদ্রা সরবরাহ দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দিতে পারে, যা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি করে।
  • মুদ্রার মান হ্রাস: মুদ্রা সরবরাহ বাড়লে টাকার মান কমে যেতে পারে, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক বাজারে।
  • সম্পদ বিতরণে বৈষম্য: মুদ্রাস্ফীতির কারণে ধনী এবং গরিবের মধ্যে বৈষম্য বাড়তে পারে।
  • বিনিয়োগে অনিশ্চয়তা: অতিরিক্ত মুদ্রাস্ফীতি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা তৈরি করতে পারে।

ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজারে মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধির প্রভাব: ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজার ঐতিহ্যবাহী আর্থিক বাজারের থেকে ভিন্ন। এখানে মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধির প্রভাব বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

১. বিটকয়েন (Bitcoin): বিটকয়েনের মতো ক্রিপ্টোকারেন্সির সরবরাহ একটি নির্দিষ্ট প্রোটোকল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, বিটকয়েনের মোট সরবরাহ ২১ মিলিয়ন-এ সীমাবদ্ধ। এই সীমিত সরবরাহ বিটকয়েনকে মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে একটি সুরক্ষা প্রদান করে। যখন সরকার বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রচুর পরিমাণে অর্থ ছাপায়, তখন বিটকয়েনের মূল্য বাড়তে পারে, কারণ এটি একটি বিকল্প বিনিয়োগ মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হয়। বিটকয়েন মাইনিং (Bitcoin mining) প্রক্রিয়া নতুন বিটকয়েন তৈরি করে, কিন্তু এটি একটি নিয়ন্ত্রিত হারে হয়।

২. ইথেরিয়াম (Ethereum): ইথেরিয়ামের ক্ষেত্রে, সরবরাহ বৃদ্ধির হার বিটকয়েনের চেয়ে ভিন্ন। ইথেরিয়ামের EIP-1559 আপগ্রেডের ফলে, প্রতিটি লেনদেনের সাথে কিছু পরিমাণ ইথেরিয়াম পুড়িয়ে ফেলা হয়, যা সরবরাহ কমাতে সাহায্য করে।

৩. অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সি: অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সির সরবরাহ তাদের নিজস্ব প্রোটোকল এবং governance মডেল দ্বারা নির্ধারিত হয়। কিছু ক্রিপ্টোকারেন্সি সময়ের সাথে সাথে সরবরাহ বৃদ্ধি করে, আবার কিছু ক্রিপ্টোকারেন্সি সীমিত সরবরাহ বজায় রাখে।

মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি এবং ট্রেডিং কৌশল: মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধির পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের জন্য কিছু ট্রেডিং কৌশল বিবেচনা করা যেতে পারে:

  • স্বর্ণে বিনিয়োগ: মুদ্রাস্ফীতির সময়ে স্বর্ণ (Gold) একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে বিবেচিত হয়।
  • রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ: রিয়েল এস্টেট মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে একটি ভালো সুরক্ষা দিতে পারে।
  • ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ: বিটকয়েনের মতো সীমিত সরবরাহের ক্রিপ্টোকারেন্সি মুদ্রাস্ফীতির সময়ে ভালো রিটার্ন দিতে পারে।
  • স্টক মার্কেটে বিনিয়োগ: মুদ্রাস্ফীতির সময়ে কোম্পানিগুলোর আয় বাড়তে পারে, যা স্টক মার্কেটে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
  • কমোডিটিতে বিনিয়োগ: কমোডিটি (Commodity) যেমন তেল, গ্যাস, এবং কৃষিপণ্য মুদ্রাস্ফীতির সময়ে ভালো ফল দিতে পারে।

মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধির পরিমাপ: বিভিন্ন উপায়ে মুদ্রা সরবরাহ পরিমাপ করা হয়। এর মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিমাপ নিচে উল্লেখ করা হলো:

  • M0: এটি হলো বাজারে থাকা সবচেয়ে তরল মুদ্রা, যেমন - হাতে থাকা নগদ টাকা এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে থাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ।
  • M1: এর মধ্যে M0 এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর চাহিদা আমানত অন্তর্ভুক্ত।
  • M2: এর মধ্যে M1, সঞ্চয় আমানত, এবং স্বল্পমেয়াদী সময় আমানত অন্তর্ভুক্ত।
  • M3: এটি সবচেয়ে ব্যাপক পরিমাপ, যার মধ্যে M2 এবং দীর্ঘমেয়াদী সময় আমানত, মানি মার্কেট অ্যাকাউন্ট, এবং অন্যান্য বিনিয়োগ অন্তর্ভুক্ত।

বিভিন্ন দেশের মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধির উদাহরণ:

  • মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ (Federal Reserve) Quantitative Easing (QE)-এর মাধ্যমে মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি করে।
  • ইউরোপীয় ইউনিয়ন: ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ব্যাংক (ECB) সুদের হার এবং বন্ড কেনার মাধ্যমে মুদ্রা সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে।
  • জাপান: ব্যাংক অফ জাপান (BOJ) ঋণ সহায়তা এবং বন্ড কেনার মাধ্যমে মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি করে।
  • চীন: পিপলস ব্যাংক অফ চায়না (PBOC) রিজার্ভের প্রয়োজনীয়তা হ্রাস এবং খোলা বাজার কার্যক্রমের মাধ্যমে মুদ্রা সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে।

মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি এবং প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ: মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধির প্রভাব প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণের মাধ্যমেও বোঝা যেতে পারে।

  • চার্ট প্যাটার্ন: মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধির ফলে স্টক মার্কেটে বুলিশ (Bullish) চার্ট প্যাটার্ন তৈরি হতে পারে।
  • মুভিং এভারেজ: মুভিং এভারেজ ব্যবহার করে বাজারের trend বোঝা যায়।
  • ভলিউম বিশ্লেষণ: ট্রেডিং ভলিউম (Trading Volume) বিশ্লেষণ করে বাজারের গতিবিধি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
  • RSI এবং MACD: এই indicator গুলো ব্যবহার করে overbought এবং oversold পরিস্থিতি নির্ণয় করা যায়।

ঝুঁকি এবং সতর্কতা: মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধির পরিস্থিতিতে বিনিয়োগ করার সময় কিছু ঝুঁকি এবং সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

  • মুদ্রাস্ফীতির ঝুঁকি: অতিরিক্ত মুদ্রাস্ফীতি বিনিয়োগের রিটার্ন কমিয়ে দিতে পারে।
  • সুদের হারের ঝুঁকি: সুদের হার বাড়লে বন্ড এবং অন্যান্য fixed-income বিনিয়োগের মূল্য কমে যেতে পারে।
  • বাজারের ঝুঁকি: বাজারের অস্থিরতা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে লোকসানের কারণ হতে পারে।
  • রাজনৈতিক ঝুঁকি: রাজনৈতিক অস্থিরতা বিনিয়োগের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

উপসংহার: মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি একটি জটিল অর্থনৈতিক প্রক্রিয়া, যা অর্থনীতির উপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে পারে। বিনিয়োগকারীদের এই প্রক্রিয়া সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে এবং সেই অনুযায়ী তাদের বিনিয়োগ কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজারের ক্ষেত্রে, মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধির প্রভাব বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি বিনিয়োগের সুযোগ এবং ঝুঁকি উভয়ই তৈরি করতে পারে।

আরও জানতে:


সুপারিশকৃত ফিউচার্স ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম

প্ল্যাটফর্ম ফিউচার্স বৈশিষ্ট্য নিবন্ধন
Binance Futures 125x পর্যন্ত লিভারেজ, USDⓈ-M চুক্তি এখনই নিবন্ধন করুন
Bybit Futures চিরস্থায়ী বিপরীত চুক্তি ট্রেডিং শুরু করুন
BingX Futures কপি ট্রেডিং BingX এ যোগদান করুন
Bitget Futures USDT দ্বারা সুরক্ষিত চুক্তি অ্যাকাউন্ট খুলুন
BitMEX ক্রিপ্টোকারেন্সি প্ল্যাটফর্ম, 100x পর্যন্ত লিভারেজ BitMEX

আমাদের কমিউনিটির সাথে যোগ দিন

@strategybin টেলিগ্রাম চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন আরও তথ্যের জন্য। সেরা লাভজনক প্ল্যাটফর্ম – এখনই নিবন্ধন করুন

আমাদের কমিউনিটিতে অংশ নিন

@cryptofuturestrading টেলিগ্রাম চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন বিশ্লেষণ, বিনামূল্যে সংকেত এবং আরও অনেক কিছু পেতে!