ভলিউম বার

cryptofutures.trading থেকে
পরিভ্রমণে চলুন অনুসন্ধানে চলুন

ভলিউম বার

ভলিউম বার হল টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি মূলত একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে হওয়া ট্রেডিং ভলিউম-এর ডেটা প্রদর্শন করে। এই ডেটা সাধারণত একটি উল্লম্ব বার আকারে দেখানো হয়, যেখানে প্রতিটি বার একটি নির্দিষ্ট সময়কালের (যেমন, ১ মিনিট, ৫ মিনিট, ১ ঘন্টা, ১ দিন) মধ্যে হওয়া লেনদেনের পরিমাণ এবং দামের পরিবর্তন নির্দেশ করে।

ভলিউম বার কিভাবে কাজ করে?

ভলিউম বার বোঝার জন্য এর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ সম্পর্কে জানা দরকার:

  • ওপেন (Open): সময়সীমার শুরুতে প্রথম ট্রেডের দাম।
  • হাই (High): সময়সীমার মধ্যে সর্বোচ্চ ট্রেডের দাম।
  • লো (Low): সময়সীমার মধ্যে সর্বনিম্ন ট্রেডের দাম।
  • ক্লোজ (Close): সময়সীমার শেষে শেষ ট্রেডের দাম।
  • ভলিউম (Volume): সময়সীমার মধ্যে মোট লেনদেনের পরিমাণ।

ভলিউম বার সাধারণত চার্ট-এর নিচে প্রদর্শিত হয়। বারের উচ্চতা ভলিউমের পরিমাণ নির্দেশ করে। উচ্চ বার মানে বেশি ভলিউম এবং নিচু বার মানে কম ভলিউম।

ভলিউম বারের গুরুত্ব

ভলিউম বার কেন গুরুত্বপূর্ণ, তা নিচে উল্লেখ করা হলো:

১. মার্কেট সেন্টিমেন্ট বোঝা: ভলিউম বার ব্যবহার করে মার্কেটের সামগ্রিক চিত্র বোঝা যায়। যদি দাম বাড়ার সাথে সাথে ভলিউম বৃদ্ধি পায়, তবে এটি একটি শক্তিশালী বুলিশ (bullish) সংকেত। এর মানে হলো, ক্রেতারা আগ্রহী এবং দাম আরও বাড়তে পারে। অন্যদিকে, দাম কমলে যদি ভলিউম বাড়ে, তবে এটি একটি শক্তিশালী বিয়ারিশ (bearish) সংকেত, যা ইঙ্গিত করে বিক্রেতারা শক্তিশালী এবং দাম আরও কমতে পারে।

২. ট্রেন্ড নিশ্চিতকরণ: ভলিউম বার একটি বিদ্যমান ট্রেন্ডকে নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। যদি কোনো শেয়ারের দাম বাড়ছে এবং ভলিউমও বাড়ছে, তবে এটি আপট্রেন্ডকে (uptrend) শক্তিশালী করে। একইভাবে, দাম কমলে এবং ভলিউম বাড়লে ডাউনট্রেন্ড (downtrend) শক্তিশালী হয়।

৩. রিভার্সাল চিহ্নিত করা: ভলিউম বার সম্ভাব্য রিভার্সাল (reversal) চিহ্নিত করতে সহায়ক হতে পারে। যদি দাম বাড়ার সময় ভলিউম কমতে থাকে, তবে এটি একটি দুর্বল আপট্রেন্ডের ইঙ্গিত দেয় এবং দামCorrections হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

৪. ব্রেকআউট সনাক্তকরণ: ভলিউম বারের মাধ্যমে ব্রেকআউট (breakout) সনাক্ত করা যায়। যখন দাম কোনো গুরুত্বপূর্ণ রেজিস্ট্যান্স (resistance) লেভেল ভেঙে উপরে যায় এবং ভলিউম উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়, তখন এটি একটি বুলিশ ব্রেকআউট নির্দেশ করে।

৫. লুকানো ডাইভারজেন্স: ভলিউম বারের মাধ্যমে লুকানো ডাইভারজেন্স (hidden divergence) খুঁজে বের করা যায়, যা ট্রেন্ডের পরিবর্তনের পূর্বাভাস দিতে পারে।

ভলিউম বার ব্যবহারের কৌশল

ভলিউম বার ব্যবহার করে ট্রেডিংয়ের জন্য কিছু কৌশল নিচে দেওয়া হলো:

১. ভলিউম স্পাইক (Volume Spike): যখন কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে ভলিউম স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি হয়, তখন তাকে ভলিউম স্পাইক বলে। এটি সাধারণত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার কারণে ঘটে, যেমন - কোনো বড় খবর বা ঘোষণার পর। ভলিউম স্পাইকগুলি ব্রেকআউট বা রিভার্সালের সংকেত দিতে পারে।

২. ভলিউম কনফার্মেশন (Volume Confirmation): এই কৌশলটিতে, দামের মুভমেন্টের সাথে ভলিউমের সম্পর্ক দেখে ট্রেড করা হয়। আপট্রেন্ডে ভলিউম বৃদ্ধি এবং ডাউনট্রেন্ডে ভলিউম হ্রাস - এই বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে ট্রেড নেওয়া উচিত।

৩. ভলিউম ডাইভারজেন্স (Volume Divergence): যখন দাম এবং ভলিউম বিপরীত দিকে যায়, তখন তাকে ভলিউম ডাইভারজেন্স বলে। এটি ট্রেন্ড দুর্বল হওয়ার ইঙ্গিত দেয়।

৪. অন ব্যালেন্স ভলিউম (On Balance Volume - OBV): অন ব্যালেন্স ভলিউম একটি জনপ্রিয় টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর যা ভলিউম এবং দামের মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণ করে মার্কেটের চাপ বুঝতে সাহায্য করে।

৫. ভলিউম ওয়েটেড এভারেজ প্রাইস (Volume Weighted Average Price - VWAP): ভলিউম ওয়েটেড এভারেজ প্রাইস হলো একটি ট্রেডিং বেঞ্চমার্ক যা একটি নির্দিষ্ট সময়কালে গড় দাম এবং ভলিউমের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়।

ভলিউম বারের প্রকারভেদ

বিভিন্ন ধরনের ভলিউম বার রয়েছে, যা বিভিন্ন ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মে ব্যবহার করা হয়:

  • স্ট্যান্ডার্ড ভলিউম বার: এটি সবচেয়ে সাধারণ ভলিউম বার, যা নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে হওয়া লেনদেনের পরিমাণ দেখায়।
  • টিক ভলিউম বার: এই বারগুলি প্রতিটি পৃথক ট্রেডকে গণনা করে এবং সে অনুযায়ী ভলিউম দেখায়।
  • হাই-লো ভলিউম বার: এই বারগুলি একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন দামের মধ্যে হওয়া লেনদেনের পরিমাণ দেখায়।

ভলিউম বারের সীমাবদ্ধতা

ভলিউম বার একটি শক্তিশালী টুল হলেও এর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে:

  • ভলিউম ডেটার নির্ভুলতা: ভলিউম ডেটা সব এক্সচেঞ্জে সমানভাবে উপলব্ধ নাও হতে পারে, তাই তথ্যের ভিন্নতা থাকতে পারে।
  • ভলিউম ম্যানিপুলেশন: কিছু ক্ষেত্রে, ভলিউম ইচ্ছাকৃতভাবে ম্যানিপুলেট (manipulate) করা হতে পারে, যা ভুল সংকেত দিতে পারে।
  • অন্যান্য ইন্ডিকেটরের সাথে ব্যবহার: শুধুমাত্র ভলিউম বারের উপর নির্ভর করে ট্রেড করা উচিত নয়। অন্যান্য টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর এবং ফান্ডামেন্টাল অ্যানালাইসিস-এর সাথে এটি ব্যবহার করা উচিত।

উদাহরণ

একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে। ধরুন, একটি শেয়ারের দাম গত কয়েক দিন ধরে বাড়ছে। আপনি দেখলেন যে, দাম বাড়ার সাথে সাথে ভলিউমও বাড়ছে। এর মানে হলো, এই আপট্রেন্ড শক্তিশালী এবং সম্ভবত দাম আরও বাড়বে। এখন, যদি আপনি দেখেন যে দাম বাড়ছে কিন্তু ভলিউম কমছে, তবে এটি একটি সতর্ক সংকেত। এর মানে হলো, ক্রেতাদের আগ্রহ কমছে এবং দামCorrections হতে পারে।

ভলিউম বার এবং অন্যান্য টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর

ভলিউম বারকে আরও কার্যকরভাবে ব্যবহার করার জন্য অন্যান্য টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটরের সাথে যুক্ত করা যেতে পারে:

  • মুভিং এভারেজ (Moving Average): মুভিং এভারেজের সাথে ভলিউম বার ব্যবহার করে ট্রেন্ডের দিক এবং শক্তি সম্পর্কে আরও ভাল ধারণা পাওয়া যায়।
  • আরএসআই (Relative Strength Index): আরএসআই-এর সাথে ভলিউম বার ব্যবহার করে ওভারবট (overbought) এবং ওভারসোল্ড (oversold) কন্ডিশন সনাক্ত করা যায়।
  • এমএসিডি (Moving Average Convergence Divergence): এমএসিডি-এর সাথে ভলিউম বার ব্যবহার করে মোমেন্টাম (momentum) এবং সম্ভাব্য ট্রেডিং সুযোগ খুঁজে বের করা যায়।
  • ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট (Fibonacci Retracement): ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্টের সাথে ভলিউম বার ব্যবহার করে সাপোর্ট (support) এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল (resistance level) সনাক্ত করা যায়।

ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেডিং-এ ভলিউম বারের ব্যবহার

ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেডিং-এ ভলিউম বার বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ক্রিপ্টো মার্কেটে প্রায়শই দ্রুত পরিবর্তন হয়, তাই ভলিউম বার ব্যবহার করে মার্কেটের গতিবিধি বোঝা এবং সঠিক ট্রেডিং সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।

ভলিউম বার সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ শব্দ

  • বুলিশ ভলিউম (Bullish Volume): দাম বাড়ার সময় ভলিউম বৃদ্ধি।
  • বিয়ারিশ ভলিউম (Bearish Volume): দাম কমার সময় ভলিউম বৃদ্ধি।
  • ভলিউম প্রোফাইল (Volume Profile): একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে বিভিন্ন দামে হওয়া ভলিউমের পরিমাণ প্রদর্শন করে।
  • পয়েন্ট অফ কন্ট্রোল (Point of Control - POC): ভলিউম প্রোফাইলে সবচেয়ে বেশি ভলিউম হওয়া দামের লেভেল।

উপসংহার

ভলিউম বার একটি শক্তিশালী ট্রেডিং টুল যা মার্কেটের গতিবিধি বুঝতে এবং সঠিক ট্রেডিং সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। এটি ব্যবহার করে মার্কেটের সেন্টিমেন্ট, ট্রেন্ড এবং সম্ভাব্য রিভার্সাল সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। তবে, শুধুমাত্র ভলিউম বারের উপর নির্ভর না করে অন্যান্য টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর এবং ফান্ডামেন্টাল অ্যানালাইসিসের সাথে মিলিয়ে ব্যবহার করা উচিত।

টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস এর আরও গভীরতা অর্জনের জন্য, ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন এবং চার্ট প্যাটার্ন সম্পর্কে জ্ঞান রাখা আবশ্যক। এছাড়াও, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং পোর্টফোলিও ডাইভারসিফিকেশন এর মতো বিষয়গুলো সম্পর্কে ধারণা রাখা একজন সফল ট্রেডার হওয়ার জন্য খুবই জরুরি।

ভলিউম বার ব্যবহারের সুবিধা এবং অসুবিধা
সুবিধা অসুবিধা
মার্কেটের সেন্টিমেন্ট বুঝতে সাহায্য করে ভলিউম ডেটার নির্ভুলতা নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে
ট্রেন্ড নিশ্চিত করতে সহায়ক ভলিউম ম্যানিপুলেশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে
সম্ভাব্য রিভার্সাল চিহ্নিত করতে পারে শুধুমাত্র ভলিউম বারের উপর নির্ভর করা উচিত নয়
ব্রেকআউট সনাক্তকরণে সাহায্য করে অন্যান্য ইন্ডিকেটরের সাথে ব্যবহার করা প্রয়োজন
লুকানো ডাইভারজেন্স খুঁজে বের করা যায়
একটি সাধারণ ভলিউম বার-এর উদাহরণ
একটি সাধারণ ভলিউম বার-এর উদাহরণ

এই নিবন্ধটি ভলিউম বার সম্পর্কে একটি প্রাথমিক ধারণা দেওয়ার জন্য লেখা হয়েছে। আরও বিস্তারিত জানার জন্য, আপনি বিভিন্ন অনলাইন রিসোর্স এবং ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মের সাহায্য নিতে পারেন।


সুপারিশকৃত ফিউচার্স ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম

প্ল্যাটফর্ম ফিউচার্স বৈশিষ্ট্য নিবন্ধন
Binance Futures 125x পর্যন্ত লিভারেজ, USDⓈ-M চুক্তি এখনই নিবন্ধন করুন
Bybit Futures চিরস্থায়ী বিপরীত চুক্তি ট্রেডিং শুরু করুন
BingX Futures কপি ট্রেডিং BingX এ যোগদান করুন
Bitget Futures USDT দ্বারা সুরক্ষিত চুক্তি অ্যাকাউন্ট খুলুন
BitMEX ক্রিপ্টোকারেন্সি প্ল্যাটফর্ম, 100x পর্যন্ত লিভারেজ BitMEX

আমাদের কমিউনিটির সাথে যোগ দিন

@strategybin টেলিগ্রাম চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন আরও তথ্যের জন্য। সেরা লাভজনক প্ল্যাটফর্ম – এখনই নিবন্ধন করুন

আমাদের কমিউনিটিতে অংশ নিন

@cryptofuturestrading টেলিগ্রাম চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন বিশ্লেষণ, বিনামূল্যে সংকেত এবং আরও অনেক কিছু পেতে!