ওয়েলেস ওয়াইল্ডার
ওয়েলেস ওয়াইল্ডার
ওয়েলেস ওয়াইল্ডার একজন স্বনামধন্য ট্রেডার, বিশ্লেষক এবং আর্থিক বাজারের প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণের অগ্রদূত। তিনি মূলত ফিউচার্স মার্কেট এবং অপশন ট্রেডিং এর জন্য সুপরিচিত। ওয়াইল্ডার এমন কিছু সূচক তৈরি করেছেন যা আজও ট্রেডারদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়। এই নিবন্ধে, ওয়েলেস ওয়াইল্ডারের জীবন, কর্ম এবং তার তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ সূচকগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
জীবন ও কর্মজীবন
ওয়েলেস ওয়াইল্ডার ১৯৪৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একজন স্ব-শিক্ষিত ট্রেডার ছিলেন এবং খুব অল্প বয়সেই ফিউচার্স মার্কেটে আগ্রহ তৈরি করেন। মাত্র ১৩ বছর বয়সে তিনি ট্রেডিং শুরু করেন এবং দ্রুতই এই ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন করেন। ওয়াইল্ডার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করেননি, বরং বাজারের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ এবং অভিজ্ঞতার মাধ্যমে তিনি ট্রেডিংয়ের জটিলতাগুলো শিখেছেন।
১৯৭০-এর দশকে ওয়েলেস ওয়াইল্ডার ফিউচার্স মার্কেটে একজন সফল ট্রেডার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তিনি বিভিন্ন কমোডিটি যেমন - সোনা, তেল, এবং কৃষিপণ্য নিয়ে ট্রেড করতেন। তার ট্রেডিং কৌশলগুলো ছিল উদ্ভাবনী এবং তিনি প্রায়শই প্রচলিত ধারণার বাইরে গিয়ে ট্রেড করতেন। ওয়াইল্ডার শুধুমাত্র একজন সফল ট্রেডার ছিলেন না, তিনি একজন দক্ষ শিক্ষকও ছিলেন। তিনি বিভিন্ন সেমিনারে এবং কর্মশালায় ট্রেডিং সম্পর্কে শিক্ষা দিতেন এবং তার জ্ঞান অন্যদের সাথে ভাগ করে নিতেন।
ওয়েলেস ওয়াইল্ডার রচিত বইগুলো ট্রেডিং জগতে বিশেষভাবে সমাদৃত। তার লেখা "সমস্যা সমাধান করে ফিউচার্স ট্রেডিং" (Solving the Futures Puzzle) বইটি টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস এবং ট্রেডিং কৌশল নিয়ে লেখা একটি ক্লাসিক হিসেবে বিবেচিত হয়।
ওয়েলেস ওয়াইল্ডারের গুরুত্বপূর্ণ সূচকসমূহ
ওয়েলেস ওয়াইল্ডার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিগত সূচক তৈরি করেছেন, যা ট্রেডারদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক। নিচে তার উল্লেখযোগ্য কিছু সূচক নিয়ে আলোচনা করা হলো:
- আরএসআই (Relative Strength Index): ওয়েলেস ওয়াইল্ডারের সবচেয়ে বিখ্যাত সৃষ্টি হলো আরএসআই। এটি একটি মোমেন্টাম নির্দেশক, যা একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেয়ারের দামের আপেক্ষিক শক্তি পরিমাপ করে। আরএসআই ০ থেকে ১০০ এর মধ্যে থাকে। সাধারণত, ৭০ এর উপরে গেলে ওভারবট (Overbought) এবং ৩০ এর নিচে গেলে ওভারসোল্ড (Oversold) হিসেবে ধরা হয়। এই সূচকটি ব্যবহার করে ট্রেডাররা বাজারের সম্ভাব্য রিভার্সাল (Reversal) সম্পর্কে ধারণা পেতে পারেন। মোমেন্টাম ট্রেডিং এর জন্য এটি খুবই উপযোগী।
- প্যারাবোলিক সার (Parabolic SAR): এটি একটি ট্রেন্ড-ফলোয়িং নির্দেশক, যা বাজারের সম্ভাব্য দিক পরিবর্তনে সাহায্য করে। প্যারাবোলিক সার একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন দামের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয় এবং এটি মূল্যের নিচে বা উপরে বিন্দু আকারে প্রদর্শিত হয়। যখন দাম প্যারাবোলিক সার-এর উপরে যায়, তখন এটিকে বুলিশ (Bullish) সংকেত এবং নিচে গেলে বিয়ারিশ (Bearish) সংকেত হিসেবে ধরা হয়। ট্রেন্ড ফলোয়িং কৌশলগুলিতে এটি ব্যবহৃত হয়।
- এভারেজ ট্রু রেঞ্জ (Average True Range - ATR): এটি বাজারের অস্থিরতা পরিমাপ করার একটি সূচক। এটিআর একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মূল্যের সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন পরিসর বিবেচনা করে তৈরি করা হয়। এটি মূলত ভলাটিলিটি বা অস্থিরতা নির্দেশ করে। উচ্চ এটিআর মানে বাজারের অস্থিরতা বেশি এবং নিম্ন এটিআর মানে বাজারের অস্থিরতা কম। ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং পজিশন সাইজিং এর জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ।
- পজিটিভ ডিরেকশনাল ইন্ডিকেটর (+DI) এবং নেগেটিভ ডিরেকশনাল ইন্ডিকেটর (-DI): এই দুটি সূচক ডিরেকশনাল মুভমেন্ট সিস্টেম এর অংশ। +DI বুলিশ ট্রেন্ডের শক্তি এবং -DI বিয়ারিশ ট্রেন্ডের শক্তি নির্দেশ করে। যখন +DI, -DI এর উপরে যায়, তখন এটিকে বুলিশ সংকেত হিসেবে ধরা হয় এবং এর বিপরীত হলে বিয়ারিশ সংকেত হিসেবে ধরা হয়। ট্রেন্ড সনাক্তকরণ এর জন্য এই সূচকগুলি খুব দরকারি।
- এডিএক্স (Average Directional Index - ADX): এটি ডিরেকশনাল মুভমেন্ট সিস্টেমের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এডিএক্স একটি ট্রেন্ডের শক্তি পরিমাপ করে। এটি ০ থেকে ১০০ এর মধ্যে থাকে এবং সাধারণত ২৫ এর উপরে গেলে শক্তিশালী ট্রেন্ড হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ট্রেন্ডের শক্তি নির্ধারণ করতে এটি ব্যবহৃত হয়।
সূচকের নাম | বিবরণ | ব্যবহার |
আরএসআই (RSI) | আপেক্ষিক শক্তি পরিমাপ করে | ওভারবট ও ওভারসোল্ড অবস্থা নির্ণয় |
প্যারাবোলিক সার (Parabolic SAR) | ট্রেন্ডের দিক পরিবর্তনে সাহায্য করে | বুলিশ ও বিয়ারিশ সংকেত প্রদান |
এভারেজ ট্রু রেঞ্জ (ATR) | বাজারের অস্থিরতা পরিমাপ করে | ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও পজিশন সাইজিং |
+DI ও -DI | বুলিশ ও বিয়ারিশ ট্রেন্ডের শক্তি নির্দেশ করে | ট্রেন্ড সনাক্তকরণ |
এডিএক্স (ADX) | ট্রেন্ডের শক্তি পরিমাপ করে | ট্রেন্ডের তীব্রতা নির্ণয় |
ট্রেডিং কৌশল এবং দর্শন
ওয়েলেস ওয়াইল্ডারের ট্রেডিং দর্শন ছিল বাজারের গতিবিধি বোঝা এবং সেই অনুযায়ী ট্রেড করা। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে এবং সুনির্দিষ্ট নিয়ম অনুসরণ করে ট্রেড করলে সাফল্যের সম্ভাবনা বাড়ে। তার কিছু গুরুত্বপূর্ণ ট্রেডিং কৌশল নিচে উল্লেখ করা হলো:
- নিয়ম-ভিত্তিক ট্রেডিং (Rules-Based Trading): ওয়াইল্ডার সবসময় একটি সুনির্দিষ্ট নিয়ম তৈরি করে ট্রেড করার কথা বলতেন। তিনি মনে করতেন, আবেগ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ট্রেড করলে ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি। তাই, ট্রেডিংয়ের জন্য একটি সুস্পষ্ট পরিকল্পনা থাকা জরুরি। ডিসিপ্লিনড ট্রেডিং এর জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
- ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা (Risk Management): ওয়েলেস ওয়াইল্ডার ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার ওপর বিশেষ জোর দিতেন। তিনি প্রতিটি ট্রেডের জন্য স্টপ-লস (Stop-loss) ব্যবহার করার কথা বলতেন, যাতে সম্ভাব্য ক্ষতি সীমিত করা যায়। স্টপ লস অর্ডার ব্যবহার করে ট্রেডাররা তাদের মূলধন সুরক্ষিত রাখতে পারে।
- বাজারের প্রেক্ষাপট বোঝা (Understanding Market Context): ওয়াইল্ডার মনে করতেন, ট্রেড করার আগে বাজারের সামগ্রিক পরিস্থিতি বোঝা জরুরি। অর্থনৈতিক সূচক, রাজনৈতিক ঘটনা এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো বিবেচনা করে ট্রেড করলে সাফল্যের সম্ভাবনা বাড়ে। ম্যাক্রো ইকোনমিক বিশ্লেষণ এক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।
- বিভিন্ন সূচকের সমন্বিত ব্যবহার (Combining Indicators): ওয়েলেস ওয়াইল্ডার শুধুমাত্র একটি সূচকের উপর নির্ভর করে ট্রেড করতেন না। তিনি বিভিন্ন সূচকের সমন্বিত ব্যবহার করে ট্রেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিতেন। উদাহরণস্বরূপ, তিনি আরএসআই এবং প্যারাবোলিক সার একসাথে ব্যবহার করে বাজারের সম্ভাব্য রিভার্সাল সম্পর্কে নিশ্চিত হতেন। কনফার্মেশন বায়াস এড়াতে এটি সহায়ক।
ওয়াইল্ডারের প্রভাব এবং উত্তরাধিকার
ওয়েলেস ওয়াইল্ডারের তৈরি করা সূচকগুলো আজও বিশ্বব্যাপী ট্রেডারদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয়। তার "সমস্যা সমাধান করে ফিউচার্স ট্রেডিং" বইটি ট্রেডিংয়ের একটি মৌলিক পাঠ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। ওয়াইল্ডারের কাজ প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে এবং অনেক ট্রেডারকে সফল হতে অনুপ্রাণিত করেছে।
বর্তমানে, অনেক ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম এবং সফটওয়্যার প্যাকেজে ওয়েলেস ওয়াইল্ডারের সূচকগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই সূচকগুলো ব্যবহার করে ট্রেডাররা তাদের ট্রেডিং কৌশল উন্নত করতে এবং বাজারের পূর্বাভাস দিতে সক্ষম হন। অ্যালগরিদমিক ট্রেডিং এবং কোয়ান্টিটেটিভ অ্যানালাইসিস এ তার অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
ওয়েলেস ওয়াইল্ডার শুধুমাত্র একজন সফল ট্রেডার ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন উদ্ভাবক এবং শিক্ষক। তার কাজ ট্রেডিং জগতে চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
আরও জানতে
- টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস
- ফিউচার্স মার্কেট
- অপশন ট্রেডিং
- আরএসআই
- প্যারাবোলিক সার
- এভারেজ ট্রু রেঞ্জ
- ডিরেকশনাল মুভমেন্ট সিস্টেম
- ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা
- ভলাটিলিটি
- ট্রেন্ড ফলোয়িং
- মোমেন্টাম ট্রেডিং
- ডিসিপ্লিনড ট্রেডিং
- ম্যাক্রো ইকোনমিক বিশ্লেষণ
- কনফার্মেশন বায়াস
- অ্যালগরিদমিক ট্রেডিং
- কোয়ান্টিটেটিভ অ্যানালাইসিস
- স্টপ লস অর্ডার
- ট্রেন্ড সনাক্তকরণ
- ট্রেন্ডের শক্তি
- পজিশন সাইজিং
সুপারিশকৃত ফিউচার্স ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম
প্ল্যাটফর্ম | ফিউচার্স বৈশিষ্ট্য | নিবন্ধন |
---|---|---|
Binance Futures | 125x পর্যন্ত লিভারেজ, USDⓈ-M চুক্তি | এখনই নিবন্ধন করুন |
Bybit Futures | চিরস্থায়ী বিপরীত চুক্তি | ট্রেডিং শুরু করুন |
BingX Futures | কপি ট্রেডিং | BingX এ যোগদান করুন |
Bitget Futures | USDT দ্বারা সুরক্ষিত চুক্তি | অ্যাকাউন্ট খুলুন |
BitMEX | ক্রিপ্টোকারেন্সি প্ল্যাটফর্ম, 100x পর্যন্ত লিভারেজ | BitMEX |
আমাদের কমিউনিটির সাথে যোগ দিন
@strategybin টেলিগ্রাম চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন আরও তথ্যের জন্য। সেরা লাভজনক প্ল্যাটফর্ম – এখনই নিবন্ধন করুন।
আমাদের কমিউনিটিতে অংশ নিন
@cryptofuturestrading টেলিগ্রাম চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন বিশ্লেষণ, বিনামূল্যে সংকেত এবং আরও অনেক কিছু পেতে!