অবি

cryptofutures.trading থেকে
পরিভ্রমণে চলুন অনুসন্ধানে চলুন

অবি (OBV) : বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক

ভূমিকা: অবি (OBV) বা অন ব্যালেন্স ভলিউম হল একটি টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস টুল। এটি বাজারের মূল্য এবং ভলিউমের মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণ করে বাজারের গতিবিধি সম্পর্কে ধারণা দেয়। এই সূচকটি বাজারের প্রবণতা নিশ্চিত করতে এবং সম্ভাব্য মূল্য পরিবর্তন সম্পর্কে পূর্বাভাস দিতে সাহায্য করে। এটি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে বিবেচিত হয়।

অবির ইতিহাস: ১৯৮০-এর দশকে জোসেফ গ্র্যাভিগনো এই সূচকটি তৈরি করেন। গ্র্যাভিগনো বিশ্বাস করতেন যে, মূল্য পরিবর্তনের সাথে সাথে ভলিউমের পরিবর্তন একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করে। এই ধারণা থেকেই তিনি অবি (OBV) তৈরি করেন।

অবি কিভাবে কাজ করে: অবি মূলত একটি ক্রমবর্ধমান লাইন। এটি প্রতিদিনের ট্রেডিং ভলিউম এবং মূল্যের পরিবর্তনের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়। যদি কোনো দিনের ক্লোজিং মূল্য আগের দিনের চেয়ে বেশি হয়, তবে সেই দিনের ভলিউম অবি লাইনে যোগ করা হয়। অন্যদিকে, যদি ক্লোজিং মূল্য কম হয়, তবে সেই দিনের ভলিউম অবি লাইন থেকে বিয়োগ করা হয়।

অবির গণনা: অবি গণনা করার জন্য নিম্নলিখিত সূত্রটি ব্যবহার করা হয়:

OBV = আগের দিনের OBV + আজকের ভলিউম, যদি আজকের ক্লোজিং মূল্য > আগের দিনের ক্লোজিং মূল্য হয় OBV = আগের দিনের OBV - আজকের ভলিউম, যদি আজকের ক্লোজিং মূল্য < আগের দিনের ক্লোজিং মূল্য হয়

উদাহরণস্বরূপ: ধরা যাক, একটি স্টকের আগের দিনের অবি ছিল ১০০ এবং আজকের ভলিউম ছিল ১,০০০ শেয়ার। যদি আজকের ক্লোজিং মূল্য আগের দিনের চেয়ে বেশি হয়, তবে আজকের অবি হবে:

OBV = ১০০ + ১,০০০ = ১,১০০

অন্যদিকে, যদি আজকের ক্লোজিং মূল্য আগের দিনের চেয়ে কম হয়, তবে আজকের অবি হবে:

OBV = ১০০ - ১,০০০ = -৯০০

অবির ব্যাখ্যা: অবি লাইনের গতিবিধি বাজারের প্রবণতা নির্দেশ করে। যদি অবি লাইন বাড়তে থাকে, তবে এটি ইঙ্গিত দেয় যে বাজারে বুলিশ ট্রেন্ড বিদ্যমান, অর্থাৎ দাম বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে, যদি অবি লাইন কমতে থাকে, তবে এটি বেয়ারিশ ট্রেন্ড-এর ইঙ্গিত দেয়, অর্থাৎ দাম কমার সম্ভাবনা রয়েছে।

অবির ব্যবহার: ১. প্রবণতা নিশ্চিতকরণ: অবি ব্যবহার করে বাজারের প্রবণতা নিশ্চিত করা যায়। যদি মূল্য এবং অবি উভয়ই একই দিকে অগ্রসর হয়, তবে সেই প্রবণতা শক্তিশালী বলে বিবেচিত হয়। ২. ডাইভারজেন্স চিহ্নিতকরণ: যখন মূল্য এবং অবি লাইনের মধ্যে ভিন্নতা দেখা যায়, তখন তাকে ডাইভারজেন্স বলা হয়। এই ডাইভারজেন্স সম্ভাব্য মূল্য পরিবর্তনের সংকেত দিতে পারে।

   * বুলিশ ডাইভারজেন্স: যখন দাম কমতে থাকে কিন্তু অবি বাড়তে থাকে, তখন বুলিশ ডাইভারজেন্স দেখা যায়। এটি ইঙ্গিত দেয় যে দাম শীঘ্রই বাড়তে পারে।
   * বেয়ারিশ ডাইভারজেন্স: যখন দাম বাড়তে থাকে কিন্তু অবি কমতে থাকে, তখন বেয়ারিশ ডাইভারজেন্স দেখা যায়। এটি ইঙ্গিত দেয় যে দাম শীঘ্রই কমতে পারে।

৩. সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল নির্ধারণ: অবি লাইন সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল হিসেবে কাজ করতে পারে। যদি অবি লাইন একটি নির্দিষ্ট স্তরে বাধা পায়, তবে এটি একটি রেজিস্ট্যান্স লেভেল হতে পারে। আবার, যদি অবি লাইন একটি নির্দিষ্ট স্তরে সমর্থন পায়, তবে এটি একটি সাপোর্ট লেভেল হতে পারে। ৪. সম্ভাব্য ব্রেকআউট চিহ্নিতকরণ: অবি লাইন ব্রেকআউট চিহ্নিত করতে সাহায্য করে। যদি অবি লাইন একটি রেজিস্ট্যান্স লেভেল ভেদ করে উপরে যায়, তবে এটি একটি বুলিশ ব্রেকআউট হতে পারে।

অবির সীমাবদ্ধতা: অবি একটি শক্তিশালী টুল হলেও এর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ১. ভুল সংকেত: অনেক সময় অবি ভুল সংকেত দিতে পারে, বিশেষ করে যখন বাজারে অস্থিরতা বেশি থাকে। ২. বিলম্বিত সংকেত: অবি প্রায়শই মূল্যের পরিবর্তনের পরে সংকেত দেয়, যার ফলে তাৎক্ষণিক লাভের সুযোগ হাতছাড়া হতে পারে। ৩. ভলিউমের উপর নির্ভরশীলতা: অবি সম্পূর্ণরূপে ভলিউমের উপর নির্ভরশীল। তাই, কম ভলিউমের স্টকগুলিতে এর কার্যকারিতা কম হতে পারে।

অন্যান্য সম্পর্কিত সূচক: অবির সাথে অন্যান্য টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর ব্যবহার করে আরও নির্ভুল পূর্বাভাস পাওয়া যেতে পারে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ সূচক নিচে উল্লেখ করা হলো:

  • মুভিং এভারেজ (Moving Average): এটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গড় মূল্য নির্দেশ করে এবং প্রবণতা নির্ধারণে সাহায্য করে। মুভিং এভারেজ
  • রিলেটিভ স্ট্রেন্থ ইন্ডেক্স (RSI): এটি অতিরিক্ত কেনা বা অতিরিক্ত বিক্রির পরিস্থিতি নির্দেশ করে। আরএসআই
  • ম্যাকডি (MACD): এটি দুটি মুভিং এভারেজের মধ্যে সম্পর্ক দেখায় এবং সম্ভাব্য ট্রেডিং সংকেত প্রদান করে। ম্যাকডি
  • বলিঙ্গার ব্যান্ডস (Bollinger Bands): এটি মূল্যের অস্থিরতা পরিমাপ করে এবং সম্ভাব্য ব্রেকআউট চিহ্নিত করে। বলিঙ্গার ব্যান্ডস
  • ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট (Fibonacci Retracement): এটি সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল নির্ধারণে ব্যবহৃত হয়। ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট

ট্রেডিং কৌশল: অবি ব্যবহার করে কিছু সাধারণ ট্রেডিং কৌশল নিচে উল্লেখ করা হলো:

১. বুলিশ ডাইভারজেন্স কৌশল: যখন দাম কমতে থাকে কিন্তু অবি বাড়তে থাকে, তখন এটি বুলিশ ডাইভারজেন্স তৈরি করে। এই ক্ষেত্রে, স্টক কেনার সুযোগ থাকে। ২. বেয়ারিশ ডাইভারজেন্স কৌশল: যখন দাম বাড়তে থাকে কিন্তু অবি কমতে থাকে, তখন এটি বেয়ারিশ ডাইভারজেন্স তৈরি করে। এই ক্ষেত্রে, স্টক বিক্রি করার সুযোগ থাকে। ৩. ব্রেকআউট কৌশল: যখন অবি একটি রেজিস্ট্যান্স লেভেল ভেদ করে উপরে যায়, তখন এটি বুলিশ ব্রেকআউট নির্দেশ করে। এই ক্ষেত্রে, স্টক কেনা যেতে পারে।

ভলিউম বিশ্লেষণ: ভলিউম বিশ্লেষণ একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অবি মূলত ভলিউমের উপর ভিত্তি করেই তৈরি হয়। তাই, ভলিউমের পরিবর্তনগুলি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করা উচিত। উচ্চ ভলিউমের সাথে দাম বৃদ্ধি পেলে, সেটি একটি শক্তিশালী বুলিশ সংকেত। অন্যদিকে, উচ্চ ভলিউমের সাথে দাম কমলে, সেটি একটি শক্তিশালী বেয়ারিশ সংকেত।

ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা: অবি ব্যবহারের সময় ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার দিকে ध्यान রাখা জরুরি। কোনো ট্রেড করার আগে স্টপ-লস অর্ডার ব্যবহার করা উচিত, যাতে সম্ভাব্য ক্ষতির পরিমাণ সীমিত রাখা যায়। এছাড়াও, পোর্টফোলিওকে বৈচিত্র্যময় করা উচিত, যাতে কোনো একটি স্টকের উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা না থাকে।

অবি এবং অন্যান্য বাজারের সরঞ্জাম: অবি সাধারণত অন্যান্য বাজারের সরঞ্জাম যেমন - ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন, চার্ট প্যাটার্ন এবং অন্যান্য টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটরের সাথে ব্যবহার করা হয়। এইগুলির সমন্বিত ব্যবহার ট্রেডিংয়ের সিদ্ধান্তগুলিকে আরও শক্তিশালী করতে পারে।

অবির প্রকারভেদ: বিভিন্ন ধরনের অবি রয়েছে, যা বিনিয়োগকারীরা তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করতে পারেন। এদের মধ্যে কয়েকটি হলো:

  • স্ট্যান্ডার্ড অবি: এটি সবচেয়ে সাধারণ এবং বহুল ব্যবহৃত অবি।
  • প্রাইস-ওয়েটেড অবি: এই ক্ষেত্রে, ভলিউমের পরিবর্তে মূল্যের উপর বেশি জোর দেওয়া হয়।
  • ভলিউম-ওয়েটেড অবি: এই ক্ষেত্রে, ভলিউম এবং মূল্য উভয়কেই বিবেচনা করা হয়।

অবি ব্যবহারের সফটওয়্যার: বিভিন্ন ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম এবং সফটওয়্যারে অবি ব্যবহারের সুবিধা রয়েছে। কিছু জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম হলো:

  • মেটাট্রেডার ৪ (MetaTrader 4)
  • ট্রেডিংভিউ (TradingView)
  • অ্যামি broker (amiBroker)

অবি ব্যবহারের টিপস:

  • অবিকে অন্যান্য সূচকের সাথে ব্যবহার করুন।
  • ডাইভারজেন্সের জন্য সতর্ক থাকুন।
  • সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেলগুলি চিহ্নিত করুন।
  • ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার নিয়ম অনুসরণ করুন।
  • নিয়মিত অনুশীলন করুন এবং অভিজ্ঞতা অর্জন করুন।

অবি: একটি চূড়ান্ত পর্যালোচনা অবি একটি শক্তিশালী এবং কার্যকরী টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস টুল। এটি বিনিয়োগকারীদের বাজারের প্রবণতা বুঝতে, সম্ভাব্য মূল্য পরিবর্তন সম্পর্কে পূর্বাভাস দিতে এবং ট্রেডিংয়ের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। তবে, এর সীমাবদ্ধতাগুলি সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং অন্যান্য সূচকের সাথে সমন্বিতভাবে ব্যবহার করা উচিত।

আরও জানতে:

অবি ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধা
সুবিধা অসুবিধা বাজারের প্রবণতা নির্ধারণে সহায়ক ভুল সংকেত দিতে পারে ডাইভারজেন্স চিহ্নিত করে সম্ভাব্য পরিবর্তন সংকেত দেয় সংকেত পেতে বিলম্ব হতে পারে সাপোর্ট ও রেজিস্ট্যান্স লেভেল নির্ধারণে সাহায্য করে কম ভলিউমের স্টকে কম কার্যকরী ব্রেকআউট চিহ্নিত করতে সহায়ক বাজারের অস্থিরতায় ভুল পথে চালিত করতে পারে

এই নিবন্ধটি অবি (OBV) সম্পর্কে একটি বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার জন্য তৈরি করা হয়েছে। আশা করি, এটি বিনিয়োগকারীদের জন্য সহায়ক হবে।


সুপারিশকৃত ফিউচার্স ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম

প্ল্যাটফর্ম ফিউচার্স বৈশিষ্ট্য নিবন্ধন
Binance Futures 125x পর্যন্ত লিভারেজ, USDⓈ-M চুক্তি এখনই নিবন্ধন করুন
Bybit Futures চিরস্থায়ী বিপরীত চুক্তি ট্রেডিং শুরু করুন
BingX Futures কপি ট্রেডিং BingX এ যোগদান করুন
Bitget Futures USDT দ্বারা সুরক্ষিত চুক্তি অ্যাকাউন্ট খুলুন
BitMEX ক্রিপ্টোকারেন্সি প্ল্যাটফর্ম, 100x পর্যন্ত লিভারেজ BitMEX

আমাদের কমিউনিটির সাথে যোগ দিন

@strategybin টেলিগ্রাম চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন আরও তথ্যের জন্য। সেরা লাভজনক প্ল্যাটফর্ম – এখনই নিবন্ধন করুন

আমাদের কমিউনিটিতে অংশ নিন

@cryptofuturestrading টেলিগ্রাম চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন বিশ্লেষণ, বিনামূল্যে সংকেত এবং আরও অনেক কিছু পেতে!