ইউএসটি (UST)

cryptofutures.trading থেকে
পরিভ্রমণে চলুন অনুসন্ধানে চলুন

ইউএসটি (UST) : একটি বিস্তারিত আলোচনা

ভূমিকা: ইউএসটি (UST) ছিল একটি অ্যালগরিদমিক স্টেবলকয়েন, যা টেরা (Terra) ব্লকচেইনের অংশ ছিল। এটি মূলত ডলারের সাথে ১:১ এর অনুপাতে মূল্য স্থিতিশীল রাখার জন্য ডিজাইন করা হয়েছিল। কিন্তু ২০22 সালের মে মাসে এটি অপ্রত্যাশিতভাবে পতন হয় এবং এর ফলে ক্রিপ্টো বাজারে বড় ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। এই নিবন্ধে, ইউএসটি-এর পেছনের ধারণা, এর কর্মপদ্ধতি, উত্থান-পতন এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

ইউএসটি কী? ইউএসটি (UST) ছিল অ্যালগরিদমিক স্টেবলকয়েন। প্রচলিত স্টেবলকয়েনগুলো, যেমন টether (USDT) বা USD Coin (USDC), তাদের মূল্য স্থিতিশীল রাখার জন্য ডলারের রিজার্ভ ব্যবহার করে। অন্যদিকে, ইউএসটি কোনো রিজার্ভ ব্যবহার না করে অ্যালগরিদমের মাধ্যমে মূল্য স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করত। এটি লুনা (LUNA) নামক অন্য একটি ক্রিপ্টোকারেন্সির সাথে যুক্ত ছিল।

ইউএসটি-এর কর্মপদ্ধতি: ইউএসটি-এর মূল্য স্থিতিশীল রাখার মূল প্রক্রিয়াটি ছিল ‘বার্ন’ (Burn) এবং ‘মিন্ট’ (Mint) মেকানিজম। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে লুনা এবং ইউএসটি-এর সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করা হতো।

  • ইউএসটি মিন্ট করার প্রক্রিয়া: যখন কেউ লুনা ব্যবহার করে ইউএসটি কিনতে চাইত, তখন কিছু পরিমাণ লুনা বার্ন করা হতো এবং সমপরিমাণ ইউএসটি তৈরি করা হতো। এর ফলে ইউএসটি-এর সরবরাহ বৃদ্ধি পেত।
  • ইউএসটি বার্ন করার প্রক্রিয়া: যখন কেউ ইউএসটি ব্যবহার করে লুনা কিনতে চাইত, তখন কিছু পরিমাণ ইউএসটি বার্ন করা হতো এবং সমপরিমাণ লুনা তৈরি করা হতো। এর ফলে ইউএসটি-এর সরবরাহ হ্রাস পেত।

এই দুটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ইউএসটি-এর দাম ১ ডলারের কাছাকাছি রাখার চেষ্টা করা হতো। যদি ইউএসটি-এর দাম ১ ডলারের উপরে যেত, তাহলে বেশি ইউএসটি মিন্ট করা হতো, যা সরবরাহ বাড়িয়ে দাম কমিয়ে দিত। আবার, দাম ১ ডলারের নিচে নেমে গেলে, ইউএসটি বার্ন করা হতো, যা সরবরাহ কমিয়ে দাম বাড়িয়ে দিত।

টেরা ব্লকচেইন: ইউএসটি টেরা ব্লকচেইন-এর নেটিভ টোকেন ছিল। টেরা একটি প্রুফ-অফ-স্টেক (Proof-of-Stake) ব্লকচেইন, যা দ্রুত এবং কম খরচে লেনদেনের জন্য ডিজাইন করা হয়েছিল। টেরা ব্লকচেইন মূলত ডিফাই (DeFi) অ্যাপ্লিকেশনগুলোর জন্য তৈরি করা হয়েছিল।

ইউএসটি-এর উত্থান: ২০২১ সালের শেষ দিকে এবং ২০২২ সালের শুরুতে ইউএসটি দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে। এর প্রধান কারণগুলো ছিল:

  • উচ্চ এপিওয়াই (APY): Anchor Protocol নামক একটি ডিফাই প্ল্যাটফর্ম ইউএসটি জমা রাখার জন্য প্রায় ২০% এপিওয়াই প্রদান করত, যা অন্যান্য স্টেবলকয়েনের তুলনায় অনেক বেশি ছিল।
  • লুনা ফাউন্ডেশন রিজার্ভ (LFG): লুনা ফাউন্ডেশন রিজার্ভ ইউএসটি-এর মূল্য স্থিতিশীল রাখার জন্য কয়েক বিলিয়ন ডলারের বিটকয়েন রিজার্ভ তৈরি করে।
  • ক্রমবর্ধমান ডিফাই ইকোসিস্টেম: টেরার ইকোসিস্টেমে বিভিন্ন ডিফাই অ্যাপ্লিকেশন তৈরি হতে থাকে, যা ইউএসটি-এর চাহিদা বাড়িয়ে দেয়।

পতন এবং এর কারণ: ২০২২ সালের মে মাসে ইউএসটি-এর মূল্য দ্রুত কমতে শুরু করে এবং অল্প সময়ের মধ্যেই ১ ডলারের নিচে নেমে যায়। এর ফলে একটি মারাত্মক ডেথ স্পাইরাল (Death Spiral) তৈরি হয়।

  • ডিপেগিং (Depegging): ইউএসটি যখন ১ ডলারের নিচে নেমে যায়, তখন ব্যবহারকারীরা তাদের ইউএসটি বিক্রি করে দিতে শুরু করে।
  • লুনা মুদ্রাস্ফীতি: ইউএসটি-এর দাম স্থিতিশীল রাখার জন্য অ্যালগরিদম প্রচুর পরিমাণে লুনা তৈরি করতে শুরু করে, যার ফলে লুনা মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়।
  • আস্থা হারানো: ইউএসটি-এর পতন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার অভাব তৈরি করে, যার ফলে আরও বেশি মানুষ ইউএসটি এবং লুনা বিক্রি করতে শুরু করে।
  • বিটকয়েন রিজার্ভের ব্যর্থতা: লুনা ফাউন্ডেশন রিজার্ভ ইউএসটি-এর মূল্য স্থিতিশীল রাখতে ব্যর্থ হয়, কারণ বিটকয়েন বিক্রি করে ইউএসটি কেনার চাপ সামলানো যাচ্ছিল না।

পতনের প্রভাব: ইউএসটি-এর পতনের ফলে ক্রিপ্টো বাজারে বড় ধরনের প্রভাব পড়ে।

  • লুনা এবং ইউএসটি-এর মূল্য প্রায় শূন্যে নেমে আসে।
  • অনেক বিনিয়োগকারী তাদের অর্থ হারায়।
  • ক্রিপ্টো মার্কেটে সামগ্রিকভাবে আস্থার অভাব দেখা দেয়।
  • অন্যান্য স্টেবলকয়েনগুলোর উপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

ডিপাই (DeFi), ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ, এবং অন্যান্য ডিজিটাল সম্পদগুলোতে এর প্রভাব ছিল ব্যাপক।

ইউএসটি থেকে শিক্ষা: ইউএসটি-এর পতন থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা পাওয়া যায়।

  • অ্যালগরিদমিক স্টেবলকয়েনের ঝুঁকি: অ্যালগরিদমিক স্টেবলকয়েনগুলো রিজার্ভ-ব্যাকড স্টেবলকয়েনের তুলনায় বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।
  • অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা: কোনো একটি নির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্ম বা টোকেনের উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা বিপজ্জনক হতে পারে।
  • বাজারের ঝুঁকি: ক্রিপ্টো বাজার অত্যন্ত পরিবর্তনশীল এবং এখানে বিনিয়োগের আগে ঝুঁকিগুলো ভালোভাবে বোঝা উচিত।
  • স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা: ক্রিপ্টো প্রকল্পগুলোতে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা খুবই জরুরি।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা: ইউএসটি-এর পতন একটি বড় ধাক্কা হলেও, স্টেবলকয়েন প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ এখনো উজ্জ্বল। ভবিষ্যতে আরও উন্নত এবং স্থিতিশীল স্টেবলকয়েন তৈরি করার জন্য গবেষণা চলছে।

  • রিজার্ভ-ব্যাকড স্টেবলকয়েন: রিজার্ভ-ব্যাকড স্টেবলকয়েনগুলো ইউএসটি-এর পতনের পরেও স্থিতিশীল রয়েছে।
  • নতুন অ্যালগরিদম: বিজ্ঞানীরা আরও উন্নত অ্যালগরিদম তৈরি করার চেষ্টা করছেন, যা স্টেবলকয়েনের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে আরও কার্যকর হবে।
  • প্রবিধান: সরকার এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো ক্রিপ্টো মার্কেটের জন্য নতুন নিয়মকানুন তৈরি করছে, যা বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করবে।

বিভিন্ন প্রকার স্টেবলকয়েন: বিভিন্ন ধরনের স্টেবলকয়েন বর্তমানে বাজারে বিদ্যমান, প্রত্যেকটির নিজস্ব বৈশিষ্ট্য এবং ঝুঁকি রয়েছে।

  • ফিয়াট-কল্যাটারাইজড স্টেবলকয়েন: এই ধরনের স্টেবলকয়েনগুলি ডলার বা ইউরোর মতো ফিয়াট মুদ্রার দ্বারা সমর্থিত। উদাহরণস্বরূপ, Tether (USDT) এবং USD Coin (USDC)
  • ক্রিপ্টো-কল্যাটারাইজড স্টেবলকয়েন: এইগুলি অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সি দ্বারা সমর্থিত, প্রায়শই অতিরিক্ত জামানতের সাথে। Dai একটি উদাহরণ।
  • অ্যালগরিদমিক স্টেবলকয়েন: ইউএসটি এই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা কোড-ভিত্তিক অ্যালগরিদমের মাধ্যমে মূল্য স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করে।

বিটকয়েন, ইথেরিয়াম, এবং অন্যান্য প্রধান ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলির সাথে ইউএসটি-এর সম্পর্ক আলোচনা করা প্রয়োজন।

প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ: ইউএসটি-এর মূল্য পতনের পূর্বে এর চার্ট বিশ্লেষণ করলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংকেত পাওয়া যায়।

  • ভলিউম বৃদ্ধি: পতনের আগে ইউএসটি-এর ট্রেডিং ভলিউম উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল, যা বাজারের অস্থিরতার পূর্বাভাস দেয়।
  • রেজিস্ট্যান্স লেভেল: ১ ডলারের সামান্য উপরে একটি রেজিস্ট্যান্স লেভেল তৈরি হয়েছিল, যা ভাঙতে ব্যর্থ হওয়ার পরে দাম দ্রুত কমতে শুরু করে।
  • মুভিং এভারেজ: ৫০-দিনের এবং ২০০-দিনের মুভিং এভারেজগুলি ডাউনট্রেন্ড নির্দেশ করছিল।

ট্রেডিং ভলিউম বিশ্লেষণ: ইউএসটি-এর ট্রেডিং ভলিউম পতনের সময় নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পায়।

  • প্রাথমিক পতন: যখন ইউএসটি ১ ডলারের নিচে নামতে শুরু করে, তখন ভলিউম দ্রুত বাড়তে থাকে, কারণ বিনিয়োগকারীরা তাদের অবস্থান থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করে।
  • চূড়ান্ত পতন: পতনের শেষ পর্যায়ে, ভলিউম আকাশচুম্বী হয়, যা বাজারের চরম ভয়ের ইঙ্গিত দেয়।

ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা: ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

  • ডাইভারসিফিকেশন: আপনার পোর্টফোলিওকে বিভিন্ন ক্রিপ্টোকারেন্সিতে ছড়িয়ে দিন।
  • স্টপ-লস অর্ডার: স্টপ-লস অর্ডার ব্যবহার করে আপনার বিনিয়োগকে সুরক্ষিত করুন।
  • গবেষণা: বিনিয়োগ করার আগে ভালোভাবে গবেষণা করুন।
  • মানসিক শৃঙ্খলা: আবেগপ্রবণ হয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না।

উপসংহার: ইউএসটি-এর পতন ক্রিপ্টো বাজারের জন্য একটি সতর্কবার্তা। এটি অ্যালগরিদমিক স্টেবলকয়েনের ঝুঁকি এবং ক্রিপ্টো বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। ভবিষ্যতে, স্টেবলকয়েন প্রযুক্তির উন্নতি এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর পদক্ষেপের মাধ্যমে ক্রিপ্টো বাজার আরও স্থিতিশীল হতে পারে।

ক্রিপ্টোকারেন্সি, ব্লকচেইন, ডিফাই, স্টেবলকয়েন, লুনা, টেরা, Anchor Protocol, ডেথ স্পাইরাল, প্রুফ-অফ-স্টেক, টether, USD Coin, ডিপাই, বিটকয়েন, ইথেরিয়াম, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, অ্যালগরিদমিক স্টেবলকয়েন, ডাই, মুভিং এভারেজ, রেজিস্ট্যান্স লেভেল, ট্রেডিং ভলিউম


সুপারিশকৃত ফিউচার্স ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম

প্ল্যাটফর্ম ফিউচার্স বৈশিষ্ট্য নিবন্ধন
Binance Futures 125x পর্যন্ত লিভারেজ, USDⓈ-M চুক্তি এখনই নিবন্ধন করুন
Bybit Futures চিরস্থায়ী বিপরীত চুক্তি ট্রেডিং শুরু করুন
BingX Futures কপি ট্রেডিং BingX এ যোগদান করুন
Bitget Futures USDT দ্বারা সুরক্ষিত চুক্তি অ্যাকাউন্ট খুলুন
BitMEX ক্রিপ্টোকারেন্সি প্ল্যাটফর্ম, 100x পর্যন্ত লিভারেজ BitMEX

আমাদের কমিউনিটির সাথে যোগ দিন

@strategybin টেলিগ্রাম চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন আরও তথ্যের জন্য। সেরা লাভজনক প্ল্যাটফর্ম – এখনই নিবন্ধন করুন

আমাদের কমিউনিটিতে অংশ নিন

@cryptofuturestrading টেলিগ্রাম চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন বিশ্লেষণ, বিনামূল্যে সংকেত এবং আরও অনেক কিছু পেতে!